সন্ত্রাসী হামলার হুমকির খবর আসার কয়েক ঘণ্টা পর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পর বিমানবন্দরে অভ্যন্তরে কী ঘটেছিল তার কিছু ভীতিকর বিবরণ আসতে শুরু করেছে।

বিবিসির এক অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটের প্রবেশদ্বারে প্রথম বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শী মিলাদ নামের একজন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‌‘লাশ, বিচ্ছিন্ন মরদেহ ও মানুষকে পাশের এক খালে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল।’

অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে বলেছেন, ‘মানুষজন বিস্ফোরণের শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তালেবানরা তখন গেটে ভীড় জমানো মানুষদের ছত্রভঙ্গ করতে আকাশের দিকে বন্দুক তাক করে গুলি ছুড়তে শুরু করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজনকে আহত শিশু হাতে দৌঁড়াতে দেখলাম।’ এটা দেখার পরপরই তিনি তার হাতে থাকা নথিপত্র ফেলে ছুটতে শুরু করেন। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে আফগানিস্তান ছাড়তে ফ্লাইটে ওঠার জন্য সেসব কাগজ প্রস্তুত করেছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাবুল বিমানবন্দরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষদর্শী এএফপিকে আরও বলেন, ‘আমি আর কখনোই দেশত্যাগ করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরে যাবো না। আমেরিকা, তাদের উদ্ধার কার্যক্রম ও তাদের ভিসার মৃত্যু হোক।’

পশ্চিমা সৈন্য-নাগরিক ও তাদের আফগান সহযোগীদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপক তোড়জোড়ের মধ্যে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ১৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বিস্ফোরণের পর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রক্তমাখা কাপড়ে আহতদের দুই চাকার বাহনে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নারী, পুরুষ ও শিশু কেউ কেউ মাথায় ব্যান্ডেজ পরিহিত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিমানবন্দরের বাইরে হামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাস্থলে বলেছেন, বিস্ফোরণটি ‘সত্যিই শক্তিশালী’ ছিল। রয়টার্সের শেয়ার করা ফুটেজে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ ঘটেছিল।’

তিনি বলেন, আশেপাশের এলাকায় ‘কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৫০০ জন’ দেখেছেন এবং কিছু ভুক্তভোগীকে ‘বিদেশী বাহিনী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আহতদের এখানে স্ট্রেচারে বহন করেছি। আমার কাপড় সম্পূর্ণ রক্তাক্ত।’

বিবিসি জানিয়েছে, বিমানবন্দরের অ্যাবে গেটের প্রবেশদ্বারে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সন্ত্রাসী হামলার হুমকির কারণে সতর্কতা হিসেবে বন্ধ করে দেওয়া তিনটি গেটের একটি অ্যাবে গেট। দেশ ছাড়তে মরিয়া হাজারো আফগান সেখানে অবস্থান করছেন।

আল-জাজিরার সংবাদদাতা শার্লট বেলিস কাবুল থেকে জানিয়েছেন, কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তথাকথিত ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রভিন্স (আইএসকেপি) বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কয়েক ঘণ্টা আগে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জেমস হিপি বিবিসিকে বলেন, কাবুল বিমানবন্দরে মারাত্মক হামলার চেষ্টা হতে পারে বলে ‘খুবই বিশ্বাসযোগ্য‘ খবর আছে তার কাছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এমন কিছু ঘটতে পারে বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

আল-জাজিরার আলী এম লতিফি কাবুল থেকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে হতাহতদের নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটছে কয়েক ডজন গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ১৩ জন।

এএস