সংসার চালাতে যাত্রী নিয়ে দিনরাত ছুটছে ৮ বছর বয়সী শিশু রাজা গোপাল রেড্ডি

বাবা-মা অন্ধ। সংসারে নেই আর কোনো উপর্জনাক্ষম ব্যক্তি। বাধ্য হয়ে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নামল ৮ বছরের শিশু। সংসার চালাতে যাত্রী নিয়ে দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। কোনোমতে ব্রেক পর্যন্ত ওই শিশুর পা পৌঁছায়। আর এভাবেই প্রাণপণে যাত্রীদের গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে সে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য সামনে এনেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়া টুডে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধপ্রদেশের চিত্তুর জেলার তিরুপতির কাছে গঙ্গুদুপল্লের নামক একটি গ্রামে। ৮ বছর বয়সী ওই শিশুর নাম রাজা গোপাল রেড্ডি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, অন্ধপ্রদেশের চিত্তুর জেলার গঙ্গুদুপল্লের গ্রামের এই ছোট্ট শিশুকে প্রায়ই অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় চলতে দেখেন স্থানীয়রা। আর এ কারণে স্থানীয়দের সবাই কম-বেশি ওই শিশুকে চেনেন। ছোট্ট এই শিশুটিকে অটোরিকশা চালাতে দেখে এক ব্যক্তি তার ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। তারপর থেকেই ভাইরাল হয়ে যায় শিশু রাজা গোপাল রেড্ডির ভিডিওটি।

তবে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোতে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই শিশু রাজা গোপালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন, আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, এত ছোট ছেলেকে কীভাবে ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি চালাতে দেওয়া হচ্ছে?

প্রসঙ্গত, বাইক অথবা অটোরিকশা রাস্তায় বের করতে গেলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। তাছাড়াও অন্য আইনি জটিলতাও রয়েছে। সেটা হলো- লাইসেন্স পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী চালককে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হয় না।

তবে অটোরিকশার ক্ষেত্রে এখনও সেরকম কোনো নিয়ম চালু করা হয়নি। সেজন্য অটোরিকশাকেই নিজের জীবনধারণের জন্য বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে এই শিশু।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শিশু রাজা গোপালের মা-বাবা দৃষ্টিহীন। উপার্জনের জন্য কোনো কাজ করতে অক্ষম তারা। এছাড়া বাড়িতে রয়েছে তার ছোট ছোট দুই ভাই বোন। অগত্যা সবার ভরণপোষণ করতে ছোট্ট কাঁধে পরিবারের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাজা।

শুধু সংসার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপার্জনই নয়। অটোরিকশাটি ডাউন পেমেন্ট দিয়ে কিনতে ৭০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে ওই পরিবারের। ফলে মাসে ৮ হাজার টাকা করে কিস্তি দিতে হচ্ছে তাদেরকে। তাই অভাবের সংসারে টান পড়ায়, অটোরিকশা চালানোর ফাঁকেই চাল-ডাল বিক্রি করে আয় করতে হচ্ছে শিশু রাজাকে।

টিএম