স্বর্ণালি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার রিসেপশনিস্ট হিসাবে চাকরি করছেন

পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন স্বর্ণালি সামন্ত। কিন্তু সেই তিনিই কি না ডোম পদের চাকরিপ্রার্থী! বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই সৃষ্টি হয়েছে শোরগোলের। প্রথম শ্রেণির স্নাতক ডোম পদের চাকরিপ্রার্থী!

যদিও এতে বিস্ময়ের কিছু দেখছেন না ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা স্বর্ণালি। তার মতে, যাদের চাকরি নেই, তাদের তো চাকরি দরকার। তা সে যে পদই হোক না কেন। কাজের কোনো ছোট-বড় হয় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পদের নাম ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট বা পরীক্ষাগার সহকারী। গত বছর ডিসেম্বর মাসে  ‘পরীক্ষাগার সহকারী’ পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকতার এনআরএস হাসপাতাল। অনলাইনের সেই বিজ্ঞাপনে নজর যায় শিবপুরের স্বর্ণালির।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আমি ফেসবুকের মাধ্যমে এনআরএসের ওই বিজ্ঞাপনটা দেখতে পাই। তারপর আবেদন করি। আমার সিভি, সনদপত্র এবং মার্কশিট বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় পাঠাই। সেখান থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমাকে অ্যাডমিট কার্ড পাঠানো হয়। গত ২১ মার্চ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই পরীক্ষা পিছিয়ে যায় আগস্টে।’

তবে এতদিন পর বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ায় অবাক হয়েছেন স্বর্ণালি। কলকাতার একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে ‘পরীক্ষাগার সহকারী’ বিষয়টি না জানলেও, কিছুটা খোঁজখবর নিতেই তার কাছে ওই পদ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়।

স্বর্ণালির কথায়, ‘প্রথমে দেখেছিলাম ল্যাব অ্যাটেনন্ডেন্ট হিসাবে চাকরি। পরে জেনেছিলাম, সেটি আসলে ডোমের কাজ। কিন্তু যাদের চাকরি নেই, তাদের চাকরি দরকার। ভালো বেতন পাওয়া যাবে, এটা ভেবেই আবেদন করেছিলাম।’

আবেদন তো করেছেন, এখন পরীক্ষার মাধ্যমে যদি ডোম পদে চাকরিটা হয়ে যায়- তাহলে যোগদান করবেন? স্বর্ণালি সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘চাকরি পেলে কেন করব না! ডোমের পদে কাজ জেনেই আমি পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। কোনো রকম খ্যাতির লোভে পরীক্ষা দিইনি। আমার বাড়ির লোকও এটা মেনে নেবে।’

হাওড়ার শিবপুরের অবিনাশ ব্যানার্জি লেনের বাবার বাড়ি স্বর্ণালির। বিয়ে হয়েছে শিবপুরেরই অনন্ত দেব চট্টোপাধ্যায় লেনে। স্বামী দেবব্রত কর্মকার একটি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থায় গাড়ি চালান। শিবপুরের ভবানী গার্লস স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

স্বর্ণালি বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থার রিসেপশনিস্ট হিসাবে চাকরি করছেন। তার একটি মেয়ে সন্তানও রয়েছে। স্বর্ণালির বক্তব্য, ‘আমি বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। আমার পরিবারকে আমাকে দেখতে হবে। পরিবারই আমার কাছে প্রধান। ভালো বেতন দিলে কেন চাকরি করব না?’

হাসপাতালের সূত্র উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এনআরএস হাসপাতালের ওই পরীক্ষায় শুধু স্বর্ণালিই নন, স্নাতক ছাড়াও স্নাতকোত্তর পাস করা প্রার্থীরাও আবেদন করেছে ওই পদে। আবেদন করেছেন ইঞ্জিনিয়াররাও। তাদের মতো স্বর্ণালিও অপেক্ষায় রয়েছেন ওই চাকরির।

টিএম