মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধ যুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির ছায়া সরকার। বার্মিজ এই সরকারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দুয়া লাসি লা মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা দেন। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করেছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

ভিডিও বার্তায় দুয়া লাসি বলেন, জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটি একটি জনবিপ্লব, তাই মিয়ানমারের প্রতিটি প্রান্তে অবস্থান করা সকল নাগরিক জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক সন্ত্রাসীদের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের ছায়া সরকার হিসেবে কাজ করছে ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের নিয়ে এই সরকার গঠন করা হয়েছে এবং এর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন দুয়া লাসি লা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত ও  ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা জারি রয়েছে। এই ঘটনার পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং সামরিক ক্ষমতার জোরেই বার্মিজ সেনাবাহিনী তা দমনের চেষ্টা করে।

পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স’র তথ্য অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে গত সাত মাসেরও বেশি সময়ে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দেওয়া ভিডিওবার্তায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনেন দুয়া লাসি। এসময় সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘এখনই হামলা পরিচালনা করতে’ দেশের বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

২০২০ সালের জাতীয় নির্বাচনে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) ভূমিধস জয় লাভের পর পার্লামেন্টে আসন বিন্যাস সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংকট দেখা দেয় দেশটিতে। মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী দেশটির কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত।

এর জেরে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সামরিক বাহিনী, কিন্তু দেশটির নির্বাচন কমিশন সেই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করার পর চলতি বছর ১ ফেব্রয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সন সুচিকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী এবং এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং।

অং সান সুচি ও তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বর্তমানে গৃহবন্দি বা কারাবন্দি অবস্থায় আছেন। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০৪৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ৬ হাজারেরও বেশি মানুষকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম