উইঘুর ও অন্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চীন গণহত্যা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে পম্পেওর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন। পরবর্তী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ব্লিনকেনকে বেছে নিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সমগ্র জিনজিয়াংজুড়ে ‘ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ স্থাপনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়ে থাকে চীন। মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের নামে প্রতিষ্ঠিত এসব কেন্দ্রগুলোতে লাখ লাখ সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের আটক করে রাখা হয়েছে।

তবে চীনা সরকারের দাবি, ওই অঞ্চলে দারিদ্র্য নির্মূলের লক্ষ্যেই প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো তৈরি হয়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, জিনজিয়াংয়ে কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটক করে রেখেছে বেইজিং।

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, উইঘুরদের নিকট থেকে জোরপূর্বক শ্রম আদায় করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা হ্রাস তো দূরের কথা বরং আরও বেড়েছে। বাণিজ্য যুদ্ধ থেকে শুরু হয়ে করোনাভাইরাস মহামারি নিয়েও এই দুই দেশের কথা ও কাজ উত্তাপ ছড়িয়েছে বহুগুণে।

বিবৃতিতে পম্পেও বলেন,‘আমি বিশ্বাস করি এই গণহত্যা এখনও চলছে। কৌশলে উইঘুরদের কিভাবে ধ্বংস করছে চীন, সেটাই আমরা প্রত্যক্ষ করছি।’

বুধবার (২০ জানুয়ারি) শপথ নেবেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর তাই মঙ্গলবারই ছিল শীর্ষ এই মার্কিন কূটনীতিকের শেষ অফিস।

পম্পেওর দেওয়া বিবৃতিতে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলেও এতে বেইজিংয়ের ওপর শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়নি।

এর আগে জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুরসহ অন্য সংখ্যালঘু মসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর চীন গণহত্যা চালিয়েছে বলে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের একটি দ্বিদলীয় কমিশন।

দ্য কংগ্রেশনাল-এক্সিকিউটিভ কমিশন অন চায়না (সিইসিসি) গত ১৪ জানুয়ারি জানায়, গত বছর চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যা চালানো হয়েছে’ বলে নতুন কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত উইঘুর মুসলিমদেরও চীন হয়রানি করছে বলে জানায় ওই কমিশন।

ধর্মীয় নেতা, বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপসহ অন্যরা বলছে, গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়মিতই ঘটছে সেখানে। অবশ্য ক্ষমতার অপব্যবহারের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন।

জিনজিয়াংয়ে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কিনা তা জানতে রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তে নামার আহ্বান জানিয়েছে সিইসিসি।

অবশ্য ওয়াশিংটন ডিসিতে অস্থিতিশীল অবস্থা সত্ত্বেও গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এই তদন্তের কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এর আগে সিইসিসি’র সহ-সভাপতি ও ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা জিম ম্যাকগভার্ন বলেছিলেন, গত বছর চীনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড মানবাধিকারকে ভূলুন্ঠিত করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক।

আর তাই মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখার জন্য বেইজিংকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে কংগ্রেস ও ক্ষমতা গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা বাইডেন প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেন,‘চীনের নির্যাতনের কারণে সংগ্রামরত মানুষের পাশে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। একইসঙ্গে চীন সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ওয়াশিংটনকে কাজ করতে হবে।’

এছাড়া গত সপ্তাহে চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির জিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিমদের দিয়ে জোরপূর্বক কাজ করিয়ে উৎপাদন করানো বিভিন্ন পণ্য, বিশেষ করে সব ধরণের তুলা ও টমেটো আমদানিতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি এ ধরনের কাজকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা (সিবিপি)।

সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয় , জিনজিয়াংয়ের মুসলিম বন্দিদের দিয়ে জোর করে কাজ করানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের ঋণের ফাঁদে আটকে ফেলা হচ্ছে এবং মুক্ত চলাচলে বাধাও সৃষ্টি করা হচ্ছে।

চীন সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তুলা উৎপাদন হয় চীনের জিনজিয়াংয়ে। সেগুলো জোর করে শ্রম আদায় করে উৎপাদিত হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণে টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট সচেতন নয় বলেও উদ্বেগ রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।

সূত্র: বিবিসি

টিএম