আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় বসার পরই নানা আশ্বাস দিতে থাকে। বারবার তারা বার্তা দিয়েছে, যে পাইলটরা দেশ ছেড়েছেন তারা দেশে ফিরে আসুক। কিন্তু নিজ দেশে ফিরতে পারবেন কি মোহাদেশে মিরাজাই? ফিরলেও কি আবার বিমান নিয়ে আকাশে ওড়ার অনুমতি দেওয়া হবে তাকে? এ প্রশ্নগুলো থেকেই গেছে।

বছর বাইশের মিরাজাই আফগানিস্তানের প্রথম নারী বিমানচালক। মাত্র মাস ছয়েক আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের বেসরকারি বিমান সংস্থা ‘ক্যাম এয়ার’-এর যাত্রিবাহী বিমান চালিয়ে শিরোনামে উঠে এসেছিলেন মিরাজাই। সে দিন তিনি কাবুল থেকে ‘বোয়িং-৭৩৭’ নিয়ে উড়ে গিয়েছিলেন হেরাট। বিমানটির ‘ক্রু’ সদস্যরা সবাই ছিলেন নারী। আফগানিস্তানের আকাশে সে দিন লেখা হয়েছিল এক নতুন ইতিহাস।

এ ‘ঐতিহাসিক’ ফ্লাইটের সাক্ষী ছিলেন জনপ্রিয় ‘অ্যাভিয়েশন ইউটিউবার’ জশ কাহিল। তার ইউটিউব চ্যানেলে সেই ফ্লাইটের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন জশ। মিরাজাইসহ অন্য ক্রু সদস্যরাও ওই ভিডিওতে তাদের কথা তুলে ধরেছিলেন। এরকম উড়ানের সঙ্গী হতে পেরে তারা সবাই ছিলেন বেশ উচ্ছ্বসিত। জশের প্রশ্নের জবাবে ককপিটে পাইলটের আসনে বসে মিরাজাই সে দিন বলেছিলেন, ‘বিমান চালাতে পেশিশক্তির দরকার হয় না। দরকার হয় মগজের।’

মিরাজাই তো বটেই, বিমানের বাকি নারী সদস্যরাও তখন ভাবতে পারেননি যে ছয় মাসের মধ্যেই রীতিমতো দেশ ছেড়ে পালাতে হতে পারে তাদের। মিরাজাইয়ের সঙ্গে সেই ফ্লাইটে সহ-পাইলট হিসেবে ছিলেন ইউক্রেনের ভেরোনিকা বরিসোভা। গত আগস্টে যে দিন একটি যাত্রিবাহী বিমান নিয়ে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মিরাজাইরা ওড়েন, সে দিনও সঙ্গে ছিলেন ভেরোনিকা। ছিলেন মিরাজাইয়ের প্রথম ফ্লাইটের সঙ্গী সেই নারী ‘ক্রুয়ের’ সবাই। তবে সে দিন আকাশে ওড়ার পর আফগানিস্তানের মাটিতে ফেরা নিয়ে যে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হবে, তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি তাদের কেউ। জশের মতে, মিরজাইদের বিমানই ছিল শেষ যাত্রীবহী বিমান, যেটি শহরটি তালেবানের দখলে আসার ঠিক আগে কাবুল ছেড়ে উড়ে যায়।

১৫ অগস্ট তালেবানের কাবুল দখলের পর মিরজাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে টুইট করেছেন অনেকেই। সেখানে ফ্লাইটের গতিবিধি দেখানোর বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য উল্লেখ করে কয়েকজন লেখেন, প্রথমে মিরাজাইয়ের ফ্লাইট যায় ইরানে। সেখান থেকে ইউক্রেনে। তবে জশ টুইটারে জানিয়েছিলেন, মিরাজাইদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তারা জর্জিয়ায় পৌঁছেছেন।

বুধবার জশ ইনস্টাগ্রামে ছবি-সহ জানিয়েছেন, মিরাজাইদের সঙ্গে তার সামনাসামনি কথা হয়েছে। তবে ঠিক কোথায় দেখা হয়েছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি। শুধু জানিয়েছেন, মিরাজাইরা ভালো আছেন। কিন্তু দেশে কি ফিরবেন মিরাজাই? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য কারও কাছেই নেই।

ইতোমধ্যে নিজেদের অধিকারের দাবিতে কাবুলের পথে নেমে চাবুক পিঠে পড়েছে আফগান নারীদের। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেশে ফিরলেও তালেবানের আশ্বাস মতো বিমানের ককপিটে বসার সুযোগ কি পাবেন মিরাজাই? সে উত্তরও অজানা।

আফগানিস্তানের প্রথম নারী পাইলট হিসেবে আকাশে ওড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব জুড়ে শিরোনামে উঠে আসন মিরজাই। তবে বিষয়টি তখনও ভালোভাবে নেয়নি তালেবান। এখন ক্ষমতা দখলের পর তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আদৌ বদলাবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।

সূত্র: আনন্দবাজার

এসএসএইচ