বিগত একশ বছরে স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি। আমূল পরিবর্তন হয়েছে চিকিৎসাক্ষেত্রে। তবে এ সত্ত্বেও করোনাভাইরাসে মৃত্যুর লাগাম টানতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির চেয়ে এ পর্যন্ত  করোনার সংক্রমণে বেশি আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছেন।

স্প্যানিশ ফ্লুতে গোটা বিশ্বে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ভয়ঙ্কর ওই ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি কাঁপিয়ে দিয়েছিল গোটা বিশ্বকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ বছরের এই মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যার চেয়েও বেশি। ওই সময় বিশ্বে যত মানুষ প্রাণ হারায় তার এক-চতুর্থাংশ ছিল এই ভাইরাসে সংক্রমিত।

যুক্তরাষ্ট্রে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৬ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি আমেরিকান। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মোট প্রাণহানির সংখ্যা এখন ৬ লাখ ৭৬ হাজারের বেশি। এছাড়া দেশটির ৪ কোটি ২২ লাখ ৯১ হাজারের বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস।      

কোভিড মহামারিতে মৃত্যুর দুঃখজনক এই মাইলফলক যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে ছাড়িয়ে গেলে যখন দেশটিতে মহামারি করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এই প্রকোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে ভাইরাসটি সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঞ্চলে এখন করোনায় মৃত্যুর প্রধান কারণ টিকাদানের ধীরগতি।

স্প্যানিশ ফ্লুকে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনা বলে অভিহিত করেন মহামারি বিশেষজ্ঞরা। কারণ ওই সময় অন্তত পাঁচ কোটি মৃত্যৃর তুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ৪৭ লাখ মৃত্যু অনেকটাই কম। তবে করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র ভিন্ন। কেননা করোনায় মোট প্রাণহানির ১৪ শতাংশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশের বাস।

১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা ছিল দেশটির বর্তমান জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগেরও কম। যার অর্থ এই সময়ের হিসাব যদি ধরা হলে যুক্তরাষ্ট্রে স্প্যানিশ ফ্লুতে মোট মৃত্যু বর্তমানের ২২ লাখ মৃত্যুর সমান। এখন ইনফ্লুয়েঞ্জায় বয়স্ক ও শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি হলেও স্প্যানিশ ফ্লুতে তরুণদের মৃত্যুঝুঁকি ছিল সবচেয়ে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সিডিসি এ প্রসঙ্গে বলছে, ওই মহামারির সময় কোনো টিকা ছিল না। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তার জন্য ছিল না কোনো অ্যান্টিবায়োটিক। ফলে ওই সময় মহামারির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল সীমিত। আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন ও স্বাস্থ্যবিধি মানার মতো ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমেই মহামারির মোকাবিলা করতে হয়েছে।

বর্তমান অবস্থা ভিন্ন। এখন এসবের সঙ্গে একাধিক নিরাপদ ও কার্যকর টিকা রয়েছে। যেসব টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে রেকর্ড কম সময়ের মধ্যে। কিন্তু টিকা নেওয়ার অনীহা প্রকট হয়েছে মানুষের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্ক ২৪ শতাংশ অর্থাৎ ছয় কোটি মানুষ এখনো টিকার এক ডোজও নেয়নি। টিকা নিতে মানুষের এই অনীহা ঐতিহাসিক নতুন এক উচ্চতায় গিয়ে ঠেকেছে। 

এএস