রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই বাইডেন এই চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য পলিটিকো।

একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন একটি চুক্তি প্রয়োজন বলে মনে করেন বাইডেন।

রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার একটি পরমাণু চুক্তি আছে। কৌশলগত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি (এসটিএআরটি) নামে এই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ (যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া) এক হাজার ৫৫০টির বেশি পরমাণু অস্ত্র রাখতে পারে না।

৩১ জুলাই ১৯৯১ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তা কার্যকর হয়। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন এখন এই চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়াতে চায় বলে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

হোয়াইট হাউস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থেই নতুন এসটিএআরটি বা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করা দরকার বলে অনেক দিন ধরেই বলছেন বাইডেন। মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার তিক্ত সম্পর্কের কারণে এখন এই চুক্তি করার প্রয়োজন আরও বেশি।

রাশিয়া অবশ্য পরমাণু চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একাধিকবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু মস্কোর সেই প্রস্তাব প্রতিবারই বাতিল করে দেন ট্রাম্প। ক্ষমতার মেয়াদের শেষের দিকে ট্রাম্প অবশ্য চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাশিয়া তখন ট্রাম্পের শর্ত মানতে রাজি হয়নি।

এখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই চুক্তির মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়াতে রাজি হওয়ায় উভয় দেশই তাতে লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

পরমাণু চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ‘এই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ পর্যন্ত বাড়ালে দুই দেশই উপকৃত হবে। তখন পরমাণু অস্ত্রের মজুত বাড়ানো হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকিও কমবে।’

দুই দেশের সেনাবাহিনীর কাছে সর্বোচ্চ কতগুলো পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে, তা নিয়েই ওই চুক্তি হয়েছিল। তাই জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এই চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আরও পাঁচ বছরের জন্য এসটিএআরটি চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে। এটা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আমেরিকার স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই আমরা রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করছি। তবে আগ্রাসী ও প্ররোচনামূলক কার্যকলাপর জন্য মস্কোকে জবাব দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রাশিয়া কোনোভাবে প্রভাবিত বা হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

এছাড়া রাশিয়ায় পুতিনবিরোধী নেতা নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের নিয়ে রাশিয়ার বিতর্কিত উদ্যোগও বাইডেন প্রশাসন খুব ভালোভাবে দেখছে না।

ব্রিফিংয়ে জেন সাকি জানিয়েছেন, রাশিয়া যেন এ ধরনের বিতর্কিত ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে।

উল্লেখ্য, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে, ২০১৯ সালে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ইন্টারমেডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি’ বা পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রসংক্রান্ত চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে ট্রাম্প প্রশাসন।

সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা করেছিলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য পলিটিকো

টিএম