জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিষয়ে একের পর এক বোমা ফাটানোর মতো অনেক গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন তিনি। কিন্তু কখনও নিজের পরিচয় সামনে আনেননি। তবে এবার প্রকাশ্যে এসেছেন সেই তথ্যদাতা। ৩৭ বছর বয়সী এই নারীর নাম ফ্রান্সেস হাউজেন। তিনি ফেসবুকের সাবেক একজন কর্মকর্তা। তার দাবি, নিরাপত্তার চেয়ে আর্থিক মুনাফাকে বেশি প্রাধান্য দেয় ফেসবুক।

স্থানীয় সময় রোববার (৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এবং নিউইয়র্ক টাইমস।

সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, ফেসবুকের সিভিক ইন্টেগ্রিটি গ্রুপের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ছিলেন ফ্রান্সেস হাউজেন। গত মে মাসে সংস্থাটির চাকরি থেকে বিদায় নেন তিনি। তবে এর আগেই ফেসবুকের কিছু গোপন নথিপত্র নিজের সংরক্ষণে রেখেছিলেন হাউজেন।

সেগুলোই একের পর এক সামনে আনছিলেন নিজের পরিচয় প্রকাশ না করেই। যদিও ফেসবুক বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেছে, তথ্য ফাঁসের বিষয়গুলো বিভ্রান্তিকর। এসব ঘটনা প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক অর্জনগুলোকে আড়াল করেছে।

রোববার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সেস হাউজেন জানান, ফেসবুক গোপনীয়তা বা নিরাপত্তার চেয়ে ব্যবসায়িক মুনাফার দিকেই বেশি নজর রাখে। তিনি জানান, চলতি বছরের মে মাসে ফেসবুকের দ্বিমুখী কর্মকাণ্ডের কারণে বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। তবে এর আগে বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ নথিপত্রের কপি নিজের সংরক্ষণে নেন তিনি।

ওই নথিগুলো পরবর্তীতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেন হাউজেন। সেসব নথির ওপর ভিত্তি করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তিন সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনগুলো ‘ফেসবুক ফাইলস’ নামে পরিচিতি পায়।

এসব প্রতিবেদনে মূলত ফেসবুকের আচরণগত বৈষম্য উঠে এসেছে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের তুলনায় বিভিন্ন তারকা ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিকদের ক্ষেত্রে ভিন্ন আচরণ করে জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ফেসবুকের নানা নিয়ম-কানুন সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য প্রযোজ্য হলেও তারকা ব্যক্তিত্বদের ক্ষেত্রে সেগুলো অনেকটাই শিথিলযোগ্য।

সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সেস হাউজেন জানান, অনেক আশা নিয়ে ফেসবুকে নিজের চাকরিজীবন শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু ভেতরে তিনি বিপরীত অবস্থা দেখতে পান। তিনি বুঝতে পারেন যে, সংস্থার নেতিবাচক কর্মকাণ্ড বা প্রভাবগুলো কাটিয়ে উঠতে গবেষণার চেয়ে কোম্পানির প্রসার ও গ্রাহক বাড়ানোর দিকেই ছিল ফেসবুকের মনোযোগ।

সম্প্রতি দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা গেছে যে- কোম্পানিটি তার প্লাটফর্মের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, কিন্তু সম্ভাব্য ক্ষতির মোকাবিলায় তেমন কিছুই তারা করে না।

এদিকে ফেসবুকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মঙ্গলবার মার্কিন সিনেটের উপকমিটির সামনে হাউজেন সাক্ষ্য দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ফেসবুক বলছে, হাউজেনের অভিযোগ বিভ্রান্তিকর।

ফ্রান্সেস হাউজেন গত মে মাসে চাকরি ছাড়লেও নিজের রেজিগনেশন লেটার দিয়েছিলেন এপ্রিল মাসে। চলমান কয়েকটি প্রজেক্টের কাজ বুঝিয়ে দিতে তিনি আরও একমাস কাজ করেছিলেন।

টিএম