আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের প্রভাবে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত থাকা প্রতিবেশী দেশ, তুরস্ক ও ইউরোপে ব্যাপকভাবে বাড়তে পরে শরণার্থীর সংখ্যা। এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

আইএমএফের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বুধবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, চলতি বছর আফগানিস্তানের অর্থনীতি ৩০ শতাংশ সংকুচিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতির এই পরিমাণ সংকোচন দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেবে দেশটির লাখ লাখ মানুষকে, সেই সঙ্গে তৈরি করবে ব্যাপকমাত্রার মানবিক বিপর্যয়।

অর্থনৈতিক সংকোচনের ফলে একদিকে যেমন শরণার্থীর সংখ্যা বাড়বে, অন্যদিকে তেমনি আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে- এমন দেশগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, ‘যেসব দেশ ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে সম্ভাব্য নতুন শরণার্থীদের জোয়ার স্বাভাবিকভাবেই তাদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে। তাছাড়া, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন শরণার্থী তৈরি হলে তা আশ্রয়দাতা দেশগুলোতে নানাবিধ সামাজিক সমস্যারও সৃষ্টি করবে।’

আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত আছে ৬ টি দেশের। এ দেশগুলো হলো- পাকিস্তান, ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও চীন। এসব দেশের ৩ টিতে বর্তমানে আছে লাখ লাখ আফগান শরণার্থী। এই দেশ ৩ টি হলো – তাজিকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তান।

এই তিন দেশের মধ্যে তাজিকিস্তান ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ সাহায্য না পেলে আর কোনো আফগান শরণার্থী নেবে না দেশটি। ইরান ও পাকিস্তানও নতুন আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ রেখেছে।

আফগানিস্তানের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে বিদেশি আর্থিক সহায়তা নির্ভর। কিন্তু গত আগস্টের মাঝামাঝি তালেবান বাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটিতে সহায়তা প্রদান করা বন্ধ রেখেছে প্রায় সব দাতা সংস্থা ও দেশসমূহ। আটকে দেওয়া হয়েছে বাইরের বিভিন্ন দেশের ব্যাংক হিসাবে আফগানিস্তানের সঞ্চিত রিজার্ভ।

ফলে, যত দিন যাচ্ছে- কিন্তু ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়ে উঠছে আর্থিক বিপর্যয়। তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে দেশটিতে।

কিন্তু তারপরও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা দেওয়ার সাহস পাচ্ছে না দাতা সংস্থা ও দেশসমূহ। তার কারণ হিসেবে প্রতিবেদেন আইএমএফ জানিয়েছে, দাতাদের শঙ্কা- তাদের প্রদান করা অর্থ বর্তমান আফগানিস্তানে হয় জঙ্গিবাদে ব্যবহার হবে নয়তো পাচার করা হবে।

এসএমডব্লিউ