কয়েক দিনের ভয়াবহ বন্যা এবং বিধ্বংসী ভূমিধসে এশিয়ার দুই দেশ ভারত এবং নেপালে অন্তত ১৩৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ে প্রতিবেশি দুই দেশে নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। বুধবার ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, গত কয়েকদিনের বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এবং নিখোঁজ রয়েছেন ১১ জন। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয় বলেছেন, তার রাজ্যে মারা গেছেন ৩৯ জন

উত্তরাখণ্ডে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন রাজ্যের নৈনিতাল অঞ্চলে সাতটি পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। প্রবল বর্ষণ এবং পানির তীব্র স্রোতে রাজ্যে দফায় দফায় ভূমিধসে বেশ কিছু বাড়িঘর এবং রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়েছে।

নৈনিতালের স্থানীয় কর্মকর্তা প্রদীপ জৈন এএফপিকে বলেছেন, নৈনিতালে ভূমিধসে বাড়ি চাপা পড়ে এক পরিবারের পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের আলমোরা জেলায় ভূমিধসে পাথর এবং কাদার নিচে চাপা পড়ে পাঁচজন মারা গেছেন। হিমালয় অঞ্চলের এই রাজ্যের প্রত্যন্ত দু’টি জেলায় সোমবার কমপক্ষে ৬ জন মারা যান।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ সতর্কতা জারি করে ওই অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, সোমবার বেশ কয়েকটি এলাকায় ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। 

অন্যদিকে, ভারতের প্রতিবেশি নেপালে গত তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যা এবং ভূমিধসে কমপক্ষে ৪৮ জন নিহত ও আরও ৩১ জন নিখোঁজ হয়েছেন। দেশজুড়ে নদ-নদীর পানি বেড়ে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এবং ভূমিধসও দেখা দিয়েছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফনীন্দ্র মণি পোখারেল চীনের সরকারি সংবাদসংস্থা সিনহুয়াকে বলেছেন, বুধবার বিকেল পর্যন্ত ৪৮ জন নিহত এবং ৩১ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়া ২৩ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে হতাহতের এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বন্যার পানিতে তলিয়ে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তাঘাট

পোখরেল বলেছেন, বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট এই দুর্যোগে ২০টি বাড়িঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। শত শত একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। দেশের ৭৭টি জেলার মধ্যে অন্তত ২০টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমরা এখনও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব শেষ করতে পারিনি।

প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুমে নেপালে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। সাধারণত জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ শুরু হয়। কিন্তু চলতি বছরের অক্টোবরেও দেশটিতে বৈরী আবহাওয়া দেখা দিয়েছে।

নেপালের আবহাওয়া বিভাগ আগামী দুই দিনে দেশের কিছু কিছু স্থানে ভারি বৃষ্টি এবং পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি তুষারপাতের পূর্বাভাষ দিয়েছে। বর্ষণ-বন্যায় দুর্যোগপ্রবণ নেপালে প্রত্যেক বছর শত শত মানুষের প্রাণহানি ও হাজার হাজার নেপালি রুপির ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।

সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, সিনহুয়া।

এসএস