ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় মারা গেছেন। তার আরও একটি পরিচয় তিনি রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরু। বৃহস্পতিবার দীপাবলীর রাতে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বর্ষীয়ান রাজনীতিক, দীর্ঘদিনের মন্ত্রী, কলকাতার সাবেক মেয়র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরু সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছিলেন বর্ণময় চরিত্র। কিছুদিন যাবত তিনি অসুস্থ ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন। পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।

একসময় আলোড়ন তোলা ছাত্রনেতা ছিলেন সুব্রত। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায় ছাত্রনেতা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে ঝড় তুলেছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হয়েছিলেন সুব্রত। তারপর থেকে তার রাজনৈতিক জীবন ছিল বৈচিত্রপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি রাজনীতিতে একসময় প্রিয়-সুব্রত-সোমেনের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হতো। প্রিয় ও সোমেন আগেই চলে গেছেন। এবার গেলেন সুব্রত।

সুব্রত মুখোপাধ্যায় মাত্র ২৬ বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মন্ত্রী হন। ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করেন, তখন সুব্রত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।

সুব্রত মুখোপধ্যায়কে সবসময় নিজের রাজনৈতিক গুরু হিসাবে মানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুব্রতর প্রস্তাবেই ১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুরে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন মমতা। তখন মমতাকে খুব একটা কেউ চিনতেন না। তিনি তখন যুব কংগ্রেসের কর্মী মাত্র। কিন্তু সুব্রতর চোখে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনে মমতা প্রার্থী হলেন, দাপুটে নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে দিলেন। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মমতাকে।

সুব্রত চলে যাওয়ার খবর পাওয়ার পর মমতা বলেছেন, ‘এমন আলোর দিনে অন্ধকার নেমে আসবে ভাবিনি। আমি সুব্রতদার মরদেহ দেখতে পারব না।’

মমতা আরও বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই আমি তার সঙ্গে থেকেছি, তার নেতৃত্বে বড় হয়েছি। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং শারদীয়া দুর্গাপূজার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। সুব্রতদার সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সুসম্পর্ক ছিল। তিনি আমার অগ্রজ ও অভিভাবকতুল্য ছিলেন।’

প্রথম দিকে সবসময় প্রচারের আলোয় থাকতেন সুব্রত, পরের দিকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। তার ধ্যানজ্ঞান ছিল দফতরের কাজ। পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসাবে তিনি ছিলেন পুরোপুরি সফল।

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নের কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ভালো কাজের জন্য পুরো কৃতিত্বটাই তিনি পাবেন। তার কাজের প্রশংসা কেন্দ্রীয় সরকারও বারবার করেছে। তার হাতে এখন চারটি দফতরের দায়িত্ব ছিল। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালেও ফাইল দেখে গেছেন তিনি।

টিএম