করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া সীমান্ত অবশেষে খুলে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ২০ মাস পর সীমান্ত খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার থেকে টিকার ডোজ পূর্ণকারী পর্যটকরা স্থল ও আকাশপথে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন।

গত বছরের শুরুর দিকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তার রোধে যুক্তরাষ্ট্রের সব সীমান্ত বন্ধ করে দেন; তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সেই সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। এতে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সীমান্তের এই কড়াকড়ি ইউরোপের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোতে বিরক্তির সৃষ্টি করে।

করোনাভাইরাস মহামারির বিস্তারের গতি ধীর করার প্রচেষ্টায় গত বছরের মার্চে বিশ্বের বেশিরভাগ অংশের ভ্রমণকারীদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

দেশটির সীমান্ত বন্ধের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশ, ব্রিটেন, চীন, ভারত ও ব্রাজিল। মেক্সিকো, কানাডার স্থলপথের দর্শনার্থীদের জন্যও সীমান্ত বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মাসের পর মাস মার্কিন সীমান্ত বিধিনিষেধ মহামারিতে সৃষ্ট লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষত বাড়িয়েছে।

৬৩ বছর বয়সী ব্রিটিশ নাগরিক অ্যালিসন হেনরি এএফপিকে বলেন, ‘এটি খুবই কষ্টদায়ক। আমি কেবল আমার ছেলেকে দেখতে চাই।’ ছেলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন ২০ মাস সময়ের পর সোমবার তাকে দেখতে নিউইয়র্কে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন ব্রিটিশ এই নারী।

মহামারিতে আটলান্টিকের উভয় পাশে আটকে পড়া সব পরিবার অবশেষে তাদের প্রিয়জনের সাথে পুনরায় মিলিত হতে যাচ্ছে। যদিও গ্রীষ্ম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ ভ্রমণের ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা হয়েছিল। তবে নির্দিষ্ট ভিসাধারী বিদেশি মার্কিন বাসিন্দাদের দেশটিতে পুনরায় প্রবেশের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না।

কিছু বিধি-নিষেধ থাকছেই

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশকে প্রভাবিত করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত হবে না। মার্কিন কর্তৃপক্ষ ভ্রমণকারীদের টিকা নেওয়ার প্রমাণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া এখনো দেশটিতে পৌঁছানোর পর ভ্রমণকারীদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ পরীক্ষার সনদ দেখাতে হবে।

সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানের যাত্রীদের টিকার পূর্ণ ডোজ নেওয়া থাকতে হবে এবং ভ্রমণের আগের তিন দিনের মধ্যে তাদের করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। দেশটিতে যাত্রীসেবা পরিচালনাকারী সব এয়ারলাইন্সকে একটি কন্টাক্ট ট্রেসিং সিস্টেম স্থাপন করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশপথ টিকার ডোজ পূর্ণকারীদের জন্য পুরোপুরি খুলে গেলেও স্থলসীমান্ত খুলবে দুই ধাপে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া অপ্রয়োজনীয় যেমন, পারিবারিক বা পর্যটন ভ্রমণের জন্যও ভ্যাকসিন নেওয়া থাকতে হবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে টিকা না নেওয়া পর্যটকরাও দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি পাবেন; যা গত দেড় বছর ধরে চালু ছিল।

এছাড়া দ্বিতীয় ধাপে আগামী জানুয়ারির শুরুর দিক থেকে স্থলপথে দেশটিতে প্রবেশের জন্য সব পর্যটকের টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নেওয়া থাকতে হবে। ভ্রমণের উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন এই সিদ্ধান্ত স্থলপথের সব পর্যটকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পাওয়া সব ভ্যাকসিন নেওয়া যাত্রীরা আকাশপথে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।

বর্তমানে মহামারি মোকাবিলায় এফডিএ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের তালিকায় আছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, জনসন অ্যান্ড জনসন, মডার্না, ফাইজার-বায়োএনটেক, কোভ্যাক্সিন, সিনোফার্ম এবং সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন।

সূত্র: এএফপি।

এসএস/জেএস