বন্ধ্যাত্ব দূর করায় নতুন পথ দেখাচ্ছে ভারতের কলকাতা। সরকারি উদ্যোগে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা দিতে পৃথক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন অর্থাৎ, বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণের উৎকর্ষ কেন্দ্র। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ভারতে এই প্রথম সরকারি ব্যবস্থায় চিকিৎসা বন্ধ্যাত্ব দূর করতে উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে এসএসকেএমে উৎকর্ষ কেন্দ্রের বহির্বিভাগ চালু হতে যাচ্ছে। এর জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে ওই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে এ প্রক্রিয়া চলছিল। শেষ পর্যন্ত বুধবার (১০ নভেম্বর) স্বাস্থ্য ভবনে দরপত্রের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে।

সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভারতে একেবারেই নতুন। স্বাস্থ্যকর্মীদের এ ধরনের চিকিৎসা পরিষেবার তেমন অভিজ্ঞতা নেই। সেই কারণে আপাতত যে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের, তারাই আগামী তিন বছর সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করবে। তিন বছর পর সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ হয়ে গেলে এ প্রতিষ্ঠানটিতে স্বাধীনভাবে পরিষেবা চালাবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে উৎকর্ষ কেন্দ্রের বহির্বিভাগ চালু হবে। পাশাপাশি বেশকিছু চিকিৎসা সরঞ্জামও কেনা হবে। কী কী চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হবে, কোথায় কোথায় তা রাখা হবে, সেসব বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে সাহায্য করবে ওই বেসরকারি সংস্থা। অর্থাৎ, সামগ্রিক পরিকাঠামোগত দিক থেকে রাজ্যকে সাহায্য করবে ওই সংস্থা। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের আশা, মাস দেড়েকের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে পথ চলা শুরু হয়ে যাবে এ উৎকর্ষ কেন্দ্রের।

এ বিষয়ে এসএসকেএমের কর্মকর্তা চিকিৎসক মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী আমাদের এ উৎকর্ষ কেন্দ্র করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগিয়েছি। কোথায় করা হবে, সেই জায়গা বেছে নেওয়া, প্রযুক্তিগত দিক থেকে যারা অভিজ্ঞ তাদের বাছাই করার জন্য বৈঠক করে চূড়ান্ত বাছাই হয়েছে। প্রথমে বহির্বিভাগ খোলা হবে। তারপর যা যা জিনিসপত্র লাগে, সেগুলো কিনে পুরো পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। যে নিঃসন্তান দম্পতিরা এখান থেকে সুবিধা পাবেন, পরবর্তী সময়ে প্রসবের পর সেই সদ্যোজাত শিশুর যত্ন এবং সামগ্রিক বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সেই অনুযায়ী পর পর প্রতিটি বিষয়ই করার চেষ্টা চলছে।

যে কলকাতায় ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের মাধ্যমে ভারতে প্রথম এবং বিশ্বে দ্বিতীয় টেস্ট টিউব বেবির জন্ম, সেই শহরেরই এবার সরকারি পরিকাঠামোয় তৈরি হতে চলেছে উৎকর্ষ কেন্দ্র। চার দশক আগে চিকিৎসক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই এ সাফল্যের সাক্ষী থেকেছিল কলকাতা। কলকাতায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের ব্যবস্থা করায় ঘুরে ফিরে বারবার কিংবদন্তী চিকিৎসকের কথাই মনে পড়ছে।

এসএসএইচ