উদ্ধারকৃত শ্রমিক দু আন

চীনের একটি স্বর্ণখনিতে বিস্ফোরণের ফলে আটকে পড়া শ্রমিকরা তাদের জীবিত ফিরে আসাকে ‘পুনর্জন্ম’ বলে অভিহিত করেছেন। ভূপৃষ্ঠের ৬০০ মিটার গভীরে আটকে পড়ার দুই সপ্তাহ পর গত রোববার তাদের উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধারের পর ১১ জন শ্রমিকের মধ্যে দুজন শ্রমিক তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। ওই দুজনের মতে, আটকে পড়ার পর জীবিত ফিরে আসা তাদেরকে ‘পুনর্জন্মের অনুভূতি’ দিচ্ছে।

গত ১০ জানুয়ারি চীনের পূর্বাঞ্চলের শ্যাংনদং প্রদেশের ইয়ানতাই শহরের হুশান এলাকার একটি স্বর্ণখনিতে বিস্ফোরণের ফলে খনি থেকে নির্গমন পথ এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। এর দুই সপ্তাহ পর ১১ জন শ্রমিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারীরা নিখোঁজ এখনও এক শ্রমিকের সন্ধান পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ৯ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং বিস্ফোরণের পর কোমায় চলে যাওয়া এক শ্রমিক গত সপ্তাহে মারা যান।

দু আন নামে এক খনিশ্রমিক হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলেন, খনির ভেতরে আটকে থাকা অবস্থায় (উদ্ধারকারী দলের) ড্রিল মেশিনের শব্দ শুনতে পেয়ে আমরা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে আমরা দাঁড়িয়ে যাই। এই অনুভূতি বর্ণনা করার মতো কোনো ভাষা নেই। মনে হচ্ছে, আমার পুনর্জন্ম হয়েছে।

ওয়াং কাং নামে অন্য এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ভূপৃষ্ঠের প্রায় ৬০০ মিটার গভীরে আটকা পড়েছিলাম। এটা খুব ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। (সবার মাঝে ফিরে আসতে পেরে) আমরা খুব খুশি।’

আটকে পড়া শ্রমিকরা যেভাবে উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে
বিস্ফোরণের পর খনিতে আটকে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন শ্রমিকরা। তারা বলছেন, ২২ জন শ্রমিকের একটি দল ওই স্বর্ণখনির প্রায় ৬০০ মিটার (২০০০ ফুট) গভীরে বিভিন্ন অংশে কাজ করতেন। ইয়ানতাই শহরের হুশান এলাকার ওই স্বর্ণখনিতে বিস্ফোরণের ফলে খনি থেকে নির্গমন পথ এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।

ওয়াং বলেন, বিস্ফোরণের পর পরিষ্কারভাবে তিনি কিছু দেখতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণের কারণে আমরা অনেক দূরে ছিটকে পড়ি। আমাদের মাথার নিরাপত্তা হেলমেটও ভেঙে যায়। ভেতরের পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে সঙ্গে থাকা অন্যদেরও খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি আমরা।’

উদ্ধার হওয়ার জন্য তারা দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে থাকেন। তারা তখন শুধু জানতে পেরেছিলেন যে- খনিতে বিস্ফোরণ ও তাদের আটকে পড়ার ব্যাপারে কোম্পানির কর্মকর্তরা ৩০ ঘণ্টা পর জানতে পেরেছেন। এসময় তাদের কাছে কোনো খাবার ও পানীয় ছিল না।

দু আন বলেন, ‘খনির ভেতরে অনেক পানি আছে। কিন্তু এটা পান করার জন্য খুব একটা ভলো নয়। আর তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমরা অল্প অল্প করে সেটা পান করতাম।’

তবে এতো ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যেও তারা সাহস হারাননি। দু আন আরও বলেন, ‘আমরা একে-অপরকে সাহস দিতাম।’

আটকে পড়া এই শ্রমিকদের ভেতর থেকে প্রতিদিন একজন করে ড্রিল পাইপে আঘাত করতে। তাদের বেঁচে থাকার তথ্য উদ্ধারকারীদের জানানোই ছিল এটার লক্ষ্য।

উদ্ধার তৎপরতার একপর্যায়ে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে টেলিফোন সংযোগ স্থাপন করা হয় এবং দীর্ঘ ও সরু একটা সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে খাবার ও ওষুধ পাঠানো হয়। অবশ্য খনিতে বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি।

এর আগে চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া ওই নির্গমণ পথ দিয়ে একটি ছোট সরু সুড়ঙ্গ করতে সমর্থ হয় উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। সেই সুড়ঙ্গ দিয়েই দড়ির সাহায্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের খাদ্য, ওষুধ, কাগজ ও পেন্সিল পাঠানো হয়।

চীনে খনি দুর্ঘটনা খুব অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় এবং এ বিষয়ে নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রেও উদাসীন দেশটির সরকার। গতবছর ডিসেম্বরে চীনের একটি কয়লাখনিতে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোক্সাইডের নিঃসরণের ফলে ২৩ খনি শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন।

এর তিন মাস আগে সেপ্টেম্বরে একই কারণে অপর একটি কয়লা খনিতে মারা গিয়েছিলেন ১৬ জন শ্রমিক। এর আগের বছর ২০১৯ সালে চীনের গুইঝৌ রাজ্যের একটি কয়লাখনিতে বিস্ফোরণের কারণে মারা গিয়েছিলেন ১৪ জন শ্রমিক।

সূত্র: বিবিসি

টিএম