ছবি: রয়টার্স

কোনো গবেষণাগার থেকে নয়, বরং উহানের সি ফুড মার্কেট থেকেই ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী রোগ করোনার জন্য দায়ী সার্স গ্রুপের ভাইরাস সার্স-কোভ-২। ‍যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে এই তথ্য।

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, করোনার উৎস সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার বাস্তুসংস্থান ও জৈব বিবর্তন বিভাগের প্রধান মাইকেল ওরোবে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী সায়েন্সে ছাপা হয়েছে সেই গবেষণা প্রতিবেদন।

করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর। তবে এই শহরের কোনো অঞ্চলে প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী দেখা গেছে- তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত মহামারি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

চীনের সরকার যদিও দৃঢ়ভাবে বলেছে- সি ফুড মার্কেট থেকেই ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এবং মানবদেহে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে বাদুড়-প্যাঙ্গোলিন বা এই জাতীয় কোনো বন্যপ্রাণীর দেহ থেকে।

প্রসঙ্গত, উহানের সি ফুড মার্কেটে গৃহ পালিত ও সামুদ্রিক নানা প্রাণীর পাশপাশি জীবিত বা প্রক্রিয়াজাত বন্যপ্রাণীর মাংসও বিক্রি হতো। মহামারি শুরুর পর অবশ্য মার্কেটটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে চীনের সরকার।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহানে সর্বপ্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটে উহানে।

তবে সি ফুড মার্কেটই প্রথম করোনা ভাইরাস দেখা গিয়েছে কি না তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহে আছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম উহানে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। যিনি প্রথম শনাক্ত হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন উহানের ভাইরাস ও জীবাণু বিষয়ক গবেষণাগারের হিসাবরক্ষক।

উহানের সি ফুড মার্কেটের সঙ্গে ওই গবেষকের কোনো সম্পর্ক ছিল না বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ সরাসরি দাবি করেন- সি ফুড মার্কেট থেকে নয়, উহানের গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাস।

তবে, মাইকেল ওরোবে তার গবেষণা প্রবন্ধে সেই দাবি খারিজ করে বলেছেন, উহানে প্রথম আক্রান্ত রোগী ১৬ ডিসেম্বর নয়, শনাক্ত হয়েছিল তার চার দিন আগে, ১১ ডিসেম্বর।

তিনি আরও বলেন, প্রথম যে ব্যক্তি এই রোগে শনাক্ত হন- তিনি একজন নারী এবং সি ফুড মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী হওয়ায় প্রতিদিনিই তাকে সেই মার্কেটে যেতে হতো।

২০১৯ সালের ০৮ ডিসেম্বর হাসপাতালে গিয়েছিলেন ওই হিসাবরক্ষক। ‘গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে’- তত্ত্বে বিশ্বাসী বিজ্ঞানী-গবেষকদের এতদিন ধারণা ছিল- করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার কারণেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু মাইকেল ওরোবির দাবি- করোনা উপসর্গজনিত কারণে নয়, সেই হিসাবরক্ষক হাসপাতালে গিয়েছিলেন দাঁতের সমস্যার কারণে।

এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে তিনি লেখেন, ‘সি ফুড মার্কেটের সেই নারী বিক্রেতাই বিশ্বের প্রথম করোনা রোগী। তার উপসর্গ ধরা পড়েছিল ১১ ডিসেম্বর। তারপর আরও কয়েকজনের দেহে এই ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেয়।’

‘তারও পর ১৬ ডিসেম্বর আমরা ওই হিসাবরক্ষকের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে জানতে পারি।’

এসএমডব্লিউ