ইউরোপজুড়ে ফের বাড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও করোনা বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। লকডাউন জারি করা হয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন শহরেও।

এরই প্রতিবাদে সেখানে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে হয়েছে সহিংসতা। পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন ৩ জন। রোববার (২১ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, করোনার সংক্রমণ ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই আবারও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে ইউরোপের একাধিক শহরে। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসের বেশ কিছু শহরে এই কড়াকড়ি মেনে নিচ্ছেন না সেখানকার নাগরিকরা।

লকডাউনের মতো যে কড়াকড়ি জারি করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে পথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বহু মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে শুরু করায় রটারডাম শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ করেন পুলিশ সদস্যরা।

এদিকে ডাচ কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে শনিবার রটারডাম শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ। এতে ৩ বিক্ষোভকারী মারাত্মক আহত হন। পরে তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বিবিসি ও রয়টার্স এই বিক্ষোভকে দাঙ্গা হিসেবে উল্লেখ করেছে। রয়টার্স বলছে, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভের সময় কয়েক শত দাঙ্গাকারী রাস্তায় বহু গাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং আগুন ধরিয়ে দেয় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এসময় পুলিশের বিরুদ্ধে পাথরও নিক্ষেপ করে দাঙ্গাকারীরা। জবাবে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।

রটারডাম শহরের পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভের পর শনিবার ৫১ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের অর্ধেকের বয়সই ১৮ বছরের কম। এছাড়া শনিবার হেগ শহরেই বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভের সময় আগুন ধরিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং বহু বাইসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, নতুন করোনা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং ইতালিতেও বিক্ষোভ হয়েছে।

করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউন জারি করা হয়েছে নেদারল্যান্ডসে। নতুন এই নিয়মের আওতায় রেস্তোরাঁ, বার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানগুলো রাত ৮ টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন খুচরা দোকান এবং সেবাগুলো সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। বাড়িতে কোনো ঘরোয়া সামাজিক অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও চারজনের বেশি অতিথি থাকতে পারবে না বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অবশ্য শুধু নেদারল্যান্ডসই নয়, একাধিক দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি করোনা টিকা বাধ্যতামূলক করতে নতুন নিয়ম আনা হচ্ছে দেশটিতে। কার্যত আগামী বছর সবার জন্যে ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে গত শুক্রবার এক ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার।

আর এরই প্রতিবাদে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বহু পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর পাশাপাশি ফ্রান্সেও ভ্যাকসিন পাসপোর্ট চালু করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

ইতালির রাজধানী রোমে ‘গ্রিন পাস’ সনদের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন দেশটির অন্তত ৩ হাজার নাগরিক। এই সনদ ছাড়া কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁ, সিনেমা, থিয়েটার, জিম এমনকি দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন না কেউ।

এছাড়া ক্রোয়েশিয়ায় রাজধানী জাগরেবেও করোনা টিকাবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। জোরপূর্বক টিকাদানকে ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা।

টিএম