দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের পর প্রাণ ফিরে পেয়েছেন এক করোনা আক্রান্ত। তিনি একটানা ভারতের কলকাতার বেসরকারি মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে একমো সাপোর্টে ছিলেন। অবশেষে এলো সাফল্য। ভারতে কোনো রোগীকে এতদিন টানা একমো সাপোর্টে রাখার নজির আর নেই।

নজিরবিহীন টানা একমো সাপোর্টে থেকে অবশেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মহাশ্বেতা কল্লাত নামের এক রোগী।

করোনা মহামারিতে গুরুতর অসুস্থদের জীবনরক্ষার ক্ষেত্রে একমো সাপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে সাফল্যের হার ৫০ শতাংশের বেশি বলে হাসপাতালের প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। একমো হলো এক্সট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেন।

করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোমে ভুগছিলেন মহাশ্বেতা কল্লাত। চলতি বছরের গত ৯ আগস্ট তাকে কলকাতার ইএম বাইপাসের আরেকটি হাসপাতাল থেকে মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে আনা হয়। তার আগে ওই হাসপাতালে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। মেডিকার চিকিৎসকদের দল দেখতে পান যে তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল অনেক কমে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে তার ফুসফুসের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে একমো সাপোর্টে রাখা হয়, যা ইতোমধ্যেই খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে উঠেছিল। একমো সাপোর্টের মাধ্যমে ফুসফুস রেস্ট ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হয়।

মহাশ্বেতা কল্লাতের এভাবে জীবন ফিরে পাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেডিকার একমো ফিজিশিয়ান চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী জানান, করোনার কারণে আগেই তীব্র অসুস্থ হওয়ায় লড়াইটা খুবই কঠিন হয়। আমরা ভাগ্যবান যে সব প্রতিকূলতাকে সরিয়ে শ্রীমতী কল্লাত, আমাদের চিকিৎসক এ কঠিন লড়াইয়ে জিততে পেরেছেন। সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া রেস্ট ভেন্টিলেশনে তার ফুসফুস সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা একটা অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব সবসময় এ লড়াইয়ে আমাদের পাশে থেকেছেন, সমর্থন জুগিয়েছেন। এজন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

একমো সাপোর্টে প্রথম ছয় সপ্তাহে মহাশ্বেতা কল্লাত চোখ মেলে তাকাননি। তার যে অসুস্থতা ছিল, তাতে মস্তিষ্ক প্রভাবিত হয়েছিল। এরপর তিনি চোখ মেলে তাকান এবং ধীরে ধীরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। দীর্ঘায়িত মেয়াদে তার ফুসফুসের উন্নতি দেখা যায়। কিন্তু কার্বনডাই অক্সাইড ঠিকমতো ছাড়তে পারছিল না ফুসফুস। শেষপর্যন্ত ৮১তম দিনে একমো থেকে সরানো হয় তাকে। দিনটি ছিল গত ২৮ অক্টোবর। পরে আরও এক মাস তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। ধীরে ধীরে ভেন্টিলেটর সাপোর্ট তুলে নেওয়া হয়। নিয়মিত ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে তিনি চেয়ারে বসতে সক্ষম হন। ফুসফুসের অসুস্থতা প্রায় সারিয়ে গত ২৯ নভেম্বর ১১২তম দিনে মহাশ্বেতা কল্লাত মেডিকা থেকে বাড়ি ফেরেন।

একমো হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে রক্ত শরীরের বাইরে একটি হার্ট-লাং মেশিনে পাঠানো হয়, যেখানে রক্ত কার্বনডাই অক্সাইড মুক্ত করে অক্সিজেন জুগিয়ে শরীরে ফেরত পাঠানো হয়। ফুসফুসকে যে সময় বিশ্রাম পাবে, কাজ করবে সেই মেশিন অর্থাৎ শরীরের বাইরে থেকেই একটি যন্ত্র ফুসফুস হিসেবে কাজ করবে আর সেই সময়টা বিশ্রামে, ওষুধে, চিকিৎসায় সেরে উঠবে করোনায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাওয়া ফুসফুস।

সূত্র: এবিপি লাইভ

এসএসএইচ