যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীরা মেক্সিকো সীমান্তে মানবেতর জীবনযাপন করছেন

৩৬ বছর বয়সী আলবার্ট তার ১০ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে গত সপ্তাহে যখন যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পৌঁছান, তখন তারা হন্ডুরাস থেকে পাচারকারীদের সঙ্গে শুরু করা দীর্ঘ এক মাসের যাত্রা ফ্লোরিডায় থাকা চাচাতো ভাইদের সঙ্গে পুনর্মিলনের মাধ্যমে শেষ হবে বলে আশা করেছিলেন। ভাইয়েরা সেখানে তাদের স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় ছিলেন।

হন্ডুরাস থেকে পাচারকারীদের মাধ্যমে বাবা-ছেলে এ সীমান্তে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু রিও গ্রান্দে নদী পেরিয়ে টেক্সাসে প্রবেশ করতে চাইলে মার্কিন সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর এজেন্টরা তাদের তুলে নেয় এবং সেতু বরাবর মেক্সিকোর দিকে পাঠিয়ে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে রয়েছে অপহরণকারীদের ভয়। আলবার্ট নিজের নামও ঠিকঠাক বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। এটি তার প্রকৃত নাম নয়। অপহরণকারীরা তাকে শনাক্ত করে ফেলতে পারেন, এমন শঙ্কায় আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় প্রকৃত নাম প্রকাশ না করার শর্ত জুড়ে দেন তিনি। আলবার্ট বলেন, ‘এ দীর্ঘ যাত্রায় সব হারিয়েছি। আমাকে কোথাও না কোথাও যেতেই হবে।’ 

যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীদের অনেকেই মেক্সিকোর সীমান্ত শহর রেনোসায় ভিড় করছেন। সবমিলিয়ে সেই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ হবে। আলবার্ট তাদেরই একজন। তিনি দেখেছেন, ‘এই শহর এখন তাঁবুতে ভরপুর। শতশত পরিবার নিরুপায় হয়ে এখানে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছে। করোনা মহামারির সময়েও সেখানে মানুষের ভিড়। মহামারির ভয় তাদের নেই। সব উপেক্ষা করে তারা অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন, কবে মার্কিন সীমান্তদ্বার খুলবে।’

কর্দমাক্ত শিবিরে দাঁড়িয়ে নিরুপায় আলবার্ট বলছিলেন, ‘এখানে আমাকে একটি তাঁবু দেওয়া হয়েছিল, ছেলেকে নিয়ে রাতে ঘুমানোর জন্য। গতকাল রাতে সব ভিজে যায়। একপর্যায়ে আমি কাঁদতে শুরু করি।’ কথাগুলো বলার সময় তার চোখেমুখে ছিল একরাশ হতাশা।

তাদের কোথাও যাওয়ার নেই 

মেক্সিকান শহর রেনোসায় যে আশ্রয়প্রার্থীরা অবস্থান করছেন, তারা মূলত মধ্য-আমেরিকা কিংবা হাইতি থেকে আসা। তারা এখন ক্যাম্পের ছোট ছোট তাঁবুতে কিংবা অস্থায়ী বস্তির ছোট ঘরে কোনোরকমে দিন পার করছেন। করোনা নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে যদি যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণের সীমান্তদ্বার খুলে দেয়, আশ্রয়প্রার্থীরা সেই অনিশ্চিত আশায় রয়েছেন।

 রেনোসার বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় এক মিলিয়ন আশ্রয়প্রার্থী রয়েছেন/ ছবি : আলজাজিরা

রেনোসায় গত ছয় মাস ধরে মানবেতর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত জুন থেকে এ শহরে আশ্রয়প্রার্থীদের শিবির গড়ে উঠতে শুরু করে। এখনো সেখানে মানুষের ঢল। কোনোভাবেই তা থামছে না। ‘২০০০ সালের শুরুর দিকের পর থেকে এত মানুষের ঢল এখানে দেখা যায়নি,’ বলছিলেন অ্যাডাম আইজ্যাকসন। তিনি ওয়াশিংটন অফিস অন ল্যাটিন আমেরিকার রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি গ্রুপের হয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

অ্যাডাম আইজ্যাকসন বলেন, ‘রেনোসায় অবস্থান করা আশ্রয়প্রার্থীদের বড় একটি অংশ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আমেরিকা ও হাইতি থেকে পালিয়ে এসেছে।’ এছাড়া দক্ষিণ আমেরিকা থেকেও লোকজন এখানে আসছে। করোনা মহামারিতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট এবং বিভিন্ন দেশে মহামারি-সংক্রান্ত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঢিলেঢালা হয়ে যাওয়ায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লোকজন অভিপ্রয়াণে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু মহামারি সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতায় যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আবেদন বন্ধ রয়েছে। আর এতেই মেক্সিকান সীমান্ত শহরে ভিড় দেখা যাচ্ছে।      

‘এখানে এত মানুষ, তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই,’ বলছিলেন ফেলিসিয়া র‍্যাঞ্জেল। তিনি সাইডওয়াক স্কুল ফর চিলড্রেন অ্যাসাইলাম সিকার্স নামে একটি সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক সহ-পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। সংস্থাটি ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে টেক্সাস সীমান্তে কাজ করছে। র‍্যাঞ্জেল বলেন, ‘প্রতিদিনই বাস ও ভ্যানে করে রেনোসায় লোক আসছে।’

টাইটেল ৪২

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাইগ্রেন্ট প্রটেকশন প্রটোকল নামে একটি একটি প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন, যা রিমেইন ইন মেক্সিকো নামেও পরিচিত।

ব্যাপক নিন্দিত এ নীতিতে বলা হয়েছিল, আশ্রয়প্রার্থীদের দাবি যতদিন মার্কিন আদালতে থাকবে, ততদিন তাদের মেক্সিকোতে অপেক্ষা করতে হবে। এ নীতি অনুযায়ী অন্তত দশ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে তাদের মেক্সিকোর মাতামরসে ছোট ছোট তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নিতে হয় এবং প্রতিদিন সহিংসতা, ধর্ষণ ও অধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়।

গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প আরেকটি নীতি প্রণয়ন করেন, যা টাইটেল ৪২ নামে পরিচিত। এ নীতি অনুযায়ী, কোভিড ১৯ সংক্রমণ এড়াতে বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে নিঃসঙ্গ বা একাকী শিশুদের জন্য এ নীতি স্থগিত করেন। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি যারা পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য সীমান্তে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য বহাল রাখেন। তার যুক্তি, ‘করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ ঠেকানো অত্যন্ত জরুরি’

গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প আরেকটি নীতি প্রণয়ন করেন, যা টাইটেল ৪২ নামে পরিচিত। এ নীতি অনুযায়ী, কোভিড ১৯ সংক্রমণ এড়াতে বেশিরভাগ আশ্রয়প্রার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে নিঃসঙ্গ বা একাকী শিশুদের জন্য এ নীতি স্থগিত করেন। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি যারা পরিবারসহ আশ্রয়ের জন্য সীমান্তে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য বহাল রাখেন। তার যুক্তি, ‘করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ ঠেকানো অত্যন্ত জরুরি।’

গত জুন থেকে মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীরা ভিড় করতে শুরু করেন/ছবি : আলজাজিরা

বাইডেনের এই যুক্তির যথার্থতা খুঁজে পান না শিকাগোর ইয়ং সেন্টার ফোর ইমিগ্রেন্ট চিলড্রেন’স রাইটসের নির্বাহী পরিচালক গ্ল্যাডিস মলিনা। গত নভেম্বরে তিনি মেক্সিকোর রেনোসা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তার ধারণা, টাইটেল ৪২ প্রকৃতপক্ষে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনোকিছু নয়। অভিবাসন আটকে দিতেই এ নীতি নেওয়া হয়েছে। এটি আসলে অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার একটি উপায় মাত্র। 

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডের সাধারণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। ভ্রমণকারীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় সীমান্ত। দেশটিতে কোভিডনীতি শিথিল হলেও টাইটেল ৪২ বহাল রয়েছে। গ্ল্যাডিস মলিনা বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন এটি ঠিক করেনি যে, কখন টাইটেল ৪২ এর মেয়াদ শেষ হবে। তবে নীতিটি স্থগিত হওয়া দরকার। এটি আমাদের প্রধান সমস্যা।’

রিমেইন ইন মেক্সিকো

টাইটেল ৪২ নীতিতে থাকা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া অন্য নীতিগুলো বহাল রয়েছে। তার মধ্য অন্যতম রিমেইন ইন মেক্সিকো বা মাইগ্রেন্ট প্রোটেকশন প্রটোকল। এ নীতি যে আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে সহজে পৌঁছাতে দেবে না তা সত্যি।

গত সপ্তাহে মেক্সিকো ওয়াশিংটনের সঙ্গে মাইগ্রেন্ট প্রোটেকশন প্রটোকল রহিতকরণ নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে ঘোষণা দেয়। যদিও গত আগস্টে টেক্সাসের একটি আদালত এ নীতি পুনর্বহালের আদেশ দেন। বাইডেন চেষ্টা করছেন এর বিরুদ্ধে আপিল করতে।

এর মধ্যেই ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটিজ বলছে, ৬ ডিসেম্বর থেকে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে কাজ শুরু হচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা টেক্সাসের সঙ্গে থাকা মেক্সিকোর সাতটি সীমান্ত পারাপার পয়েন্টে অপসারণ অভিযানের মাধ্যমে পুনরায় মাইগ্রেন্ট প্রোটেকশন প্রটোকল নীতি কার্যকর হবে। এতে বোঝা যাচ্ছে সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের বিদ্যমান সমস্যা কতটা ভয়াবহ হতে যাচ্ছে।

রেনোসা শিবিরে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের কঠিন এক ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যেখানে ওঁত পেতে রয়েছে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি, সংঘবদ্ধ অপরাধসহ নানা বিপদ

 

ক্যাম্পে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ধোয়া কাপড় ছড়িয়ে রাখা হয়েছে/ছবি : আলজাজিরা

রেনোসা শিবিরে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের কঠিন এক ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে, যেখানে ওঁত পেতে রয়েছে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি, সংঘবদ্ধ অপরাধসহ নানা বিপদ।

ভয়াবহ বিপদের আঁচ করা যায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আশ্রয়প্রার্থীর বয়ানে। তাকে ও তার সাত বছর বয়সী ছেলেকে দুই মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। মুখোশধারী একদল লোক তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ১০ হাজার ডলার মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ পাওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘দুই মাস আমি ও আমার ছেলে সূর্যের মুখ দেখিনি। সত্যিটা হলো আমি জানি না, আমাকে এর চেয়ে বেশি আর কতটা সইতে হবে।’ 

সহিংসতার হুমকি

আশ্রয়প্রার্থী অনেক বাবা-মা সহিংসতার ভয়ে তাদের সন্তানকে একাকী ব্রিজ পার করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারা এটি করতে পেরেছেন, কারণ নিঃসঙ্গ বা একাকী শিশুদের ক্ষেত্রে টাইটেল ৪২ রহিত করা হয়েছে। একবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যেতে পারলে দেশটি এ শিশুদের জিম্মায় নিয়ে নেয়। তাদের বাবা-মা আশায় থাকেন, হয়তো মেক্সিকো থেকে সে দেশে পৌঁছে সন্তানের সঙ্গে একত্রিত হবেন, সেখানে থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা হবে।

রেনোসা ক্যাম্পে থাকা এক যুগল নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, তাদের ১৫ বছর বয়সী ছেলেকে মারপিট করা হয়েছে এবং ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে যৌন হয়রানির হুমকি দেওয়া হয়েছে। এক রাতে তো মেয়েটিকে তাঁবু থেকে বের করে নিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপর ওই যুগল সিদ্ধান্ত নেন, সীমান্ত পার করে ছেলে-মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেবেন, যাতে জর্জিয়ায় গিয়ে তারা তাদের দাদিকে খুঁজে বের করতে পারে এবং তার সঙ্গে নিরাপদে থাকতে পারে

রেনোসা ক্যাম্পে থাকা এক যুগল নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, তাদের ১৫ বছর বয়সী ছেলেকে মারপিট করা হয়েছে এবং ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে যৌন হয়রানির হুমকি দেওয়া হয়েছে। এক রাতে তো মেয়েটিকে তাঁবু থেকে বের করে নিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপর ওই যুগল সিদ্ধান্ত নেন, সীমান্ত পার করে ছেলে-মেয়েকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেবেন, যাতে জর্জিয়ায় গিয়ে তারা তাদের দাদিকে খুঁজে বের করতে পারে এবং তার সঙ্গে নিরাপদে থাকতে পারে। তারা বলেন, ‘আমাদের  আশা, হয়তো আমরা তাদের সঙ্গে আবারও এক হতে পারব।’ দুই সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়ার পর তাদের সঙ্গে রয়ে গেছে ৯ বছর বয়সী ছেলেটি।

গত কয়েক মাসে ক্যাম্প থেকে এভাবে হাজারো ছেলে-মেয়েকে একাকী যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা। মেক্সিকোর স্থানীয় গির্জা কর্তৃপক্ষ ও স্বেচ্ছাসেবকরা ক্যাম্পে বসবাসকারীদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাসহ অন্যান্য মানবিক প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছে।

লোরডেস গঞ্জালেস, যিনি দীর্ঘদিন ধরে রেনোসার দরিদ্র লোকজনের জন্য কাজ করেন। বর্তমানে তিনি একটি অ্যাকটিভিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে কাজ করছেন। প্রতিদিন তিনি অ্যাসোসিয়েশনের লোকজনদের নিয়ে ক্যাম্পে ঘুরে অসুস্থদের খুঁজে বের করেন। তাঁবু পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় অসুস্থ লোকজন তাদের ঘিরে ধরে এবং ওষুধ চাইতে থাকে।

লোরডেস গঞ্জালেস ও সুয়াপা রোসা ক্যাম্পের বসবাসকারীদের চিকিৎসাসেবার খোঁজখবর নেন/ছবি : আলজাজিরা

তিনি বলেন, ‘যখন আমরা এখানে আসি, তখন অসুস্থ লোকজন আসা শুরু করে।’ গঞ্জালেস কথাগুলো বলার সময় ক্যাম্পের ভেতরে তাঁবুগুলোর ফাঁকে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তার কাছে গর্ভবতী এক নারী কিছু ওষুধ চান। এক বৃদ্ধা বলেন, তার কাছে ব্লাড সুগার কমানোর কোনো ওষুধ নেই। একটি মেয়ে বলে, তার হার্নিয়ার সমস্যা। এক মা এসে বলেন, তার ছেলেকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

তবুও আশা বেঁচে থাকে

গঞ্জালেসের সঙ্গে ক্যাম্পে এসেছেন সুয়াপা রোসা নামে ৩৬ বছর বয়সী এক নারী চিকিৎসক। একসময় তিনি সান পেদ্রো সুলা হাসপাতালে কাজ করতেন। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে এসেছেন। একদল লোক তাকে হুমকি দিয়েছিল, যদি তিনি হাসপাতাল ছেড়ে না যান, তবে তাকে মেরে ফেলা হবে।

রিও গ্রান্দে নদী পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে রোসাও ছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে তাকেও মার্কিন সীমান্তবাহিনী মেক্সিকোতে ফেরত পাঠিয়েছে। গঞ্জালেস যে সংস্থার হয়ে কাজ করেন, সেই সংস্থার পরিচালিত স্থানীয় একটি ক্লিনিকে কাজ করার আগে রোসা ক্যাম্পে দুই সপ্তাহ কাটান। ক্যাম্পে লোকজনের নানা অসুখ ও চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে রোসা খোঁজখবর রাখেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি খুবই নাজুক।’

রেনোসা ক্যাম্পে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের চোখেমুখে রয়েছে আশার ছাপ। এখন দুর্দশার মধ্য দিয়ে গেলেও তারা আশা করেন, একদিন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নিরাপদ জীবনে ফেরা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসা আশ্রয়প্রার্থী সাবেক এক স্কুলশিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মনে হয় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। জীবনে ভয়াবহ কিছু পরিবর্তন ঘটে গেছে।’ তিনি জানান, ১৪ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে তিনি রিও গ্রান্দে নদী পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মার্কিন সীমান্তবাহিনী মেক্সিকোতে ফেরত পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন সীমান্তদ্বার খোলার অপেক্ষায়। অলৌকিকভাবে তো কতকিছুই হয়।’ 

আরএইচ/এসএস