অস্ত্রবিরতি শেষ, পাক সরকারের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ টিটিপির
ছবি: আলজাজিরা
পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতি শেষে পাকিস্তানের কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী তেহরিক-ই- তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে। গোষ্ঠীটির নেতারা আরও জানিয়েছেন, পাক সরকারের সঙ্গে পরবর্তী অস্ত্রবিরতি চুক্তি করার কোনো আগ্রহ তাদের নেই।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি তালেবান হিসেবে স্বীকৃত টিটিপির পক্ষ থেকে বলা হয়, পাকিস্তানের বিভিন্ন কারাগারে টিটিপির শতাধিক নেতাকর্মী বন্দি আছেন। মাসখানেক আগে যখন পাক সরকারের সঙ্গে অস্ত্রবিরতির চুক্তি হয়েছিল তখন সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেওয়া হবে।
বিজ্ঞাপন
‘কিন্তু আমরা দেখলাম, সেই বন্দি নেতা-কর্মীদের তো মুক্তি দেওয়াই হয়নি, উল্টো লাক্কি মারওয়াত, সোয়াত, বাজাউর, দির ও সোয়াবিতে টিটিপি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী’- বিবৃতিতে অভিযোগ করেন টিটিপি নেতারা।
‘যেহেতু সরকার চুক্তির প্রাথমিক শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, তাই টিটিপিও অস্ত্রবিরতি চুক্তিকে আর এগিয়ে নিতে আগ্রহী নয়। ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে টিটিপি যাবে কি না সে বিষয়েও নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা আমরা।’
বিজ্ঞাপন
গত ৮ নভেম্বর পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে এক মাসের অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল টিটিপি, যে সংগঠনটিকে কয়েক বছর আগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
চুক্তি সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী। ০৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে ফাওয়াদ বলেছিলেন, ‘নিষিদ্ধ গোষ্ঠী তেহরিক ই তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে জন্য সম্পূর্ণ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তানের সরকার। এই অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।’
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইতোমধ্যে একমাসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে; কিন্তু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যে অভিযোগ টিটিপি এনেছে, সে সম্পর্কে মন্তব্য চেয়ে ফাওয়াদ চৌধুরি ও দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী কিংবা সেনাবাহিনী- কেউই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে উদ্বেগ জানিয়েছেন পাকিস্তানের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। রাজধানী ইসলামাবাদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব পিস স্টাডিজের পরিচালক আমির রানা আল জাজিরাকে বলেন, ‘সর্বশেষ বিবৃতিতে এটি স্পষ্ট যে, নিকট ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে টিটিপির প্রভাব কমবে এমন সম্ভাবনা নেই।’
‘তারা এখনও রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে চলছে এবং এই অস্ত্রবিরতিকে তারা একটি সমরকৌশল হিসেবে নিয়েছিল। এটিকে তারা যুদ্ধের সমাপ্তি হিসেবে দেখেনি, দেখেছে যুদ্ধের অংশ হিসেবে।’
নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইকে হত্যাচেষ্টার মাধ্যমে ২০০৯ সালে প্রথম পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি পায় টিটিপি। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টিটিপির একের পর এক আত্মঘাতী হামলা ও বোমা হামলায় পাকিস্তানে এরই মধ্যে নিহত হয়েছেন কয়েক হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ ।
২০১৪ সালে আফগান সীমান্তের কাছে পেশোয়ারে সামরিক বাহিনী পরিচালিত একটি বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে ১৩২ শিশুসহ ১৪৯ জনকে হত্যা করেছিল টিটিপি। এই হামলাটিকে গোষ্ঠীটির সবচেয়ে বড় হামলা বলে মনে করা হয়।
সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বরও পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে একটি বোমা হামলার দায় স্বীকার করে তেহরিক ই তালেবান। ওই হামলায় চার সেনা নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। টিটিপির পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে বলা হয় দুই দিন আগে তাদের চার যোদ্ধাকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালিয়েছে তারা।
এসএমডব্লিউ