তুরস্কের মুদ্রা লিরার দাম কমছেই। সোমবারও (২১ নভেম্বর) লিরার দাম পড়ে যায়। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, তিনি আর্থিক নীতি বদলাবেন না। আর তাই ইসলাম মেনেই তিনি সুদের হার বাড়াচ্ছেন না। অবশ্য তার এই ভাষণের পর লিরার দাম সামান্য বৃদ্ধি পায়।

এদিকে লিরার টানা দরপতনে তুরস্কে এখন জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। মুদ্রাস্ফীতির হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুর্কি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার সমানে কমাতে বলছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই নীতির ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতির হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তার ভাষণে বলেছেন, তিনি ইসলামকে অনুসরণ করেই চলবেন। সেজন্যই তিনি সুদের হার কম করতে বলেছেন। তবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাহায্য করার কথা বলেছেন এবং পেনশন তহবিলে আরও অর্থ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এরদোয়ানের ভাষায়, ‘একজন মুসলিম হিসেবে আমি সেটাই করব, যা আমাকে ইসলাম করতে বলে। সেটাই আমার কাছে একমাত্র নীতি-নির্দেশিকা।’

সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, সোমবার একসময় লিরার দাম মার্কিন ডলারের তুলনায় ১১ শতাংশ কমে যায়। পরে অবশ্য দাম কিছুটা বাড়ে। লিরার দাম কমে যাওয়ায় তুরস্কের সাধারণ মানুষ এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছেন।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাষণের পর লিরার দাম ১০ শতাংশ বাড়ে। নভেম্বরের শুরু থেকে লিরার দাম ৪৫ শতাংশ পড়ে গেছে। সোমবার দেশের প্রধান শেয়ার বাজারে একসময় বেচাকেনা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়।

বিদেশি কূটনীতিকরা মনে করছেন, আর্থিক উন্নতি হলে ২০২৩ সালের নির্বাচনে সহজে জয়লাভ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন এরদোয়ান। এর ফলে তিন দশক ধরে তিনি তুরস্কে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট মনে করেন, মুদ্রার দাম কম হলে রফতানি বাড়বে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে হলে সুদের হার বাড়াতে হবে। তবে এরদোয়ান আবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি মুদ্রাস্ফীতির হার চার শতাংশের মধ্যে রাখবেন।

এর আগে গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছিলেন, তিনি আর্থিক স্বাধীনতার জন্য লড়াই লড়ছেন। মূলত তুরস্ককে বিদেশি বিনিয়োগের নির্ভরতা থেকে বের করে আনাই তার লক্ষ্য।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে তুরস্কের নতুন মুদ্রা লিরা চালু হয়। লিরা চালু হওয়ার পর থেকে বিশ্ববাজারে এই মুদ্রার মান বেশ ভালো অবস্থানে ছিল। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে লিরার দরপতন শুরু হয়।

২০০৬ সালে তুর্কি এক লিরার মান ছিল বাংলাদেশি ৫২ টাকা, ২০০৭ সালে ৪৮ টাকা, ২০০৮ সালে ৫৮ টাকা, ২০০৯ সালে ৪২ টাকা, ২০১০ সালে ৪৬ টাকা, ২০১১ সালে ৪৫ টাকা, ২০১২ সালে ৪৫ টাকা, ২০১৩ সালে ৪৫ টাকা, ২০১৪ সালে ৩৫ টাকা, ২০১৫ সালে ৩২ টাকা, ২০১৬ সালে ২৬ টাকা, ২০১৭ সালে ২১ টাকা, ২০১৮ সালে ২১ টাকা, ২০১৯ সালে ১৫ টাকা, ২০২০ সালে ১৪ টাকা, ২০২১ এর শুরুতে ১১ টাকা থাকলেও তা বর্তমানে ৬-৭ টাকায় এসে পৌঁছেছে।

লিরার সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ২০০৮ সালে। তখন এক তুর্কি লিরায় ৫৮ টাকা পাওয়া যেত। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের পর থেকে তুরস্কে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মুদ্রাস্ফীতি শুরু হয়। যা এখন সর্বনিম্ন রেকর্ড গড়েছে। তুরস্ক ও তুরস্কের অধীনস্থ দ্বীপ দেশ নর্থ সাইপ্রাসেও লিরা ব্যবহৃত হয়।

টিএম