ইন্দোনেশিয়ায় ভাসছে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা, অসুস্থ অনেকে নিহত ১
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ আচেহ উপকূলে শিশু এবং নারীসহ শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বহনকারী বিকল হয়ে যাওয়া একটি নৌকা মেরামতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। নৌকা মেরামতে সহায়তা করলেও উপকূলে গত ২৮ দিন ধরে ভাসতে থাকা রোহিঙ্গারা ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রয় পাবেন না, বরং তাদের নৌকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, রোববার আচেহ প্রদেশের পশ্চিমের সুমাত্রা দ্বীপের সমুদ্র উপকূলের বিরুয়েন এলাকার জলে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাটি ভাসতে দেখেন মৎসজীবীরা। নৌকাটিতে প্রায় ১২০ জন শিশু, নারী এবং পুরুষ রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
নৌবাহিনীর স্থানীয় কর্মকর্তা ডিয়ান সূর্যসায়াহ বলেছেন, ‘রোহিঙ্গারা ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক নন। আমরা তাদের শরণার্থী হিসেবে দেশে আনতে পারি না। সরকারের নীতির সাথে মিল রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ার আগে খাদ্য, ওষুধ এবং পানি-সহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান করবে।
বিজ্ঞাপন
ইন্দোনেশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক ১৯৫১ সালের কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। যে কারণে শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে দেশটির আইনি কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বিশ্বের তৃতীয় কোনও দেশে পৌঁছানোর জন্য অনেক সময় শরণার্থীরা ইন্দোনেশিয়াকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নৌকাটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে এবং সেটি নোঙ্গর করার অনুমতি দেওয়া উচিত। নৌকায় থাকা শরণার্থীদের নিরাপত্তা ও জীবন নিয়ে ইউএনএইচসিআর উদ্বিগ্ন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের নেতা বদরুদ্দিন ইউনুস বলেছেন, সমুদ্রে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা গত ২৮ দিন ধরে ভাসছেন। তাদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং একজন মারাও গেছেন।
সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সমুদ্র শান্ত থাকায় এই সময়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বিপজ্জনক সাগর পথে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টাকারী শরণার্থীদের সহায়তার আহ্বান জানালেও বেশিরভাগ সময় তাদের ফেরত পাঠানো হয়। গত কয়েক বছরে মিয়ানমার থেকে অন্তত কয়েকশ’ রোহিঙ্গা শরণার্থী আচেহ পৌঁছেছেন, যাদের সবাই কয়েক মাস ধরে সমুদ্রে ভাসছিলেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানের মুখে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমান।
রোহিঙ্গারা বলেছেন, রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের গণহত্যা, ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনে বেসামরিক হত্যা এবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও জানিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স।
এসএস