ইরান-ইন্দোনেশিয়ায় আকস্মিক বন্যায় নিহত অন্তত ১০
গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় ইরান এবং ইন্দোনেশিয়ায় অন্তত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ইরানে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া আরও দু’জন নিখোঁজ এবং আহত হয়েছেন এক ডজনের বেশি মানুষ। মঙ্গলবার ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদনে উভয় দেশে বন্যায় হতাহতের এই তথ্য জানিয়েছে।
ইরানের সরকারি সংবাদসংস্থা আইআরএনএকে দেশটির জাতীয় উদ্ধার সেবা সংস্থার মুখপাত্র মুজতবা খালেদি বলেছেন, আমরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং বন্যায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে দেখছি। তিনি বলেছেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় অন্তত ৮ জন নিহত এবং দু’জন নিখোঁজ রয়েছেন। আরও ১৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে, ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে বন্যায় অন্তত দু’জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বন্যায় এই দ্বীপের অনেক বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় সেখানকার প্রায় ২৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সুমাত্রার পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের জন্য বন উজারকে দায়ী করেছেন।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা বলেছে, গত কয়েক দিন ধরে ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে সেখানকার নদীর তীর উপচে পড়ছে এবং আবাসিক এলাকায় পানির স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আচেহ প্রদেশের পিরাক তিমুর এলাকার বাসিন্দা মুজাক্কির বলেন, আমরা বছরে ৫ থেকে ৮ বার বন্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু এবারের বন্যা সবচেয়ে মারাত্মক হিসাবে দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইরানের স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা রহিম আজাদি বলেছেন, ‘দেশটিতে বন্যায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পাঁচজন ফার্স প্রদেশের।’
এর আগে, সোমবার স্থানীয় একজন কর্মকর্তা বলেন, আকস্মিক বন্যায় এই প্রদেশে কমপক্ষে দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আজাদি বলেন, ভারী বৃষ্টিতে কৃষি, অবকাঠামো, এবং শহুরে ও গ্রামীণ আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরান রেড ক্রিসেন্ট বন্যাদুর্গত এলাকার ৩ হাজারের বেশি মানুষকে জরুরি আবাসন সরবরাহ এবং ২০ হাজারের বেশিকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছে। দেশটির সরকারি টেলিভিশনকে এই তথ্য দিয়েছেন রেড ক্রিসেন্টের ইরানের উদ্ধার ও জরুরি সেবাবিভাগের প্রধান মেহদি ভালিপোর।
তিনি বলেন, অনেক বাড়িঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন এলাকায় রেড ক্রিসেন্টের পাঁচ শতাধিক দল বন্যার্তদের সহায়তায় মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইরান রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, ইরানের ৩১টি প্রদেশের অর্ধেকেরও বেশি প্রদেশের ৮৭টি শহরে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করা হচ্ছে। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে ইরানের আবহাওয়া সংস্থা।
দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ায় শুধুমাত্র ইরানের দক্ষিণাঞ্চলই ভুগছে না। বরং উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি আরব দেশেও ভারী বর্ষণ এবং ব্ন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী কয়েক দিন আবহাওয়া আরও দুর্যোগপূর্ণ থাকতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে এই অঞ্চলের দেশগুলো।
দুবাই, আবু ধাবিসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন প্রান্তেও ভারী বর্ষণ দেখা দিয়েছে। এর ফলে এই অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে বারবার প্রচণ্ড খরার মুখোমুখি হওয়া ইরানেও প্রায়ই অসময়ের বন্যা দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খরা-বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা এবং তীব্রতা খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস