ভারতে যেখানে সেখানে মানুষের থুতু বা পিক ফেলা ঠেকাতে বহুদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছেন রাজা আর প্রীতি নরসিমহা দম্পতি। একটি গাড়িতে তারা নানা স্লোগান লিখেছেন যাতে মানুষ সেগুলো দেখে সচেতন হয়। গাড়ি থেকে লাউডস্পিকারও ব্যবহার করছেন।  কিন্তু এ কাজে সফল হওয়া তাদের জন্য মোটেও সহজ কাজ না। 

২০১০ সাল থেকে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছেন এই দম্পতি। চেষ্টার কোথাও ছাড় দেননি তারা। পথঘাট, ভবন ও সেতুগুলোতে তো ঘুরেছেনই। কর্মশালা, প্রচার অভিযান, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সবকিছুরই চেষ্টা করেছেন এই দম্পতি। 

একবার তারা পানের পিকে লাল হয়ে যাওয়া পুনে রেল স্টেশনের দেওয়াল নিজেরাই রং করে দেন। কিন্তু তিন দিনের মাথায় আবার মানুষ সেখানে পানের পিক ফেলতে শুরু করে।

হুটহাট করে যেখানে-সেখানে থুতু ফেলার কারণে যে ওই এলাকাটি নোংরা হয়, তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়, ঘটনাটি এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৌশলীরা বলছেন পানের রসের অ্যাসিড থেকে কলকাতার ঐতিহাসিক হাওড়া সেতুর ধাতব কাঠামো বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

আবার মানুষকে যেখানে-সেখানে থুতু বা পিক ফেলতে নিষেধ করাটা তারা যে সবসময় ভালোভাবে নেন এমন না। ‘আপনার সমস্যা কি? এটা কি আপনার বাপের সম্পত্তি?’ রাজাকে একবার এমন কথাও শুনতে হয়েছে। 

বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে-সেখানে থুতু বা পিক ফেলায় পুরুষরা এগিয়ে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। পুরুষদের এই এগিয়ে থাকার বিষয়ে ভারতীয় সংবাদপত্র টেলিগ্রাফের সহকারী সম্পাদক উদ্দালক মুখার্জি বলছেন, যেসব বিষয়কে পৌরুষের অলংকার বলে ধরা হয়, ইচ্ছা হলে প্রকাশ্যে থুতু ফেলা তার একটি। 

যে দম্পতি এই থুতু ও পিক ফেলা ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রাজা নরসিমহার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন এই পিক ফেলার অভ্যাস? জবাবে তিনি বলছেন, এর পেছনে কারণ হলো রাগ থেকে সময় কাটানো যে কোন কিছু- অর্থাৎ আর কিছু করার নেই- একটু থুতু ফেলি, অথবা সোজা কথায়- তারা মনে করে থুতু বা পিক ফেলা তাদের অধিকার। 

একটা সময় আমেরিকা-ইউরোপের মানুষের মধ্যেও এই যেখানে-সেখানে থুতু ফেলার প্রবণতা ছিল। তবে পশ্চিমের দেশগুলোতে এই অভ্যাসের বিরুদ্ধে জনগণ প্রকৃত অর্থে সোচ্চার হয়ে ওঠে যক্ষ্মা ছড়ানোর পটভূমিতে। 

রাজা নরসিমহা আরও পিকদানি বা থুকদানিও তো আজকাল চোখে পড়ে না। আমায় যদি থুতু বা পিক ফেলতে হয়, কোথায় ফেলব? মনে পড়ে, আমার শৈশবে কলকাতায় দেখেছি ল্যাম্পপোস্টের গায়ে পিক ফেলার পাত্র বাঁধা থাকত- বালি ভর্তি পিকদানি। সেসব আর নেই। ফলে মানুষ যত্রতত্র থুতু ও পিক ফেলছে। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষকে শুধু শাস্তি দিলে তো হবে না। বুঝতে হবে কেন তারা যত্রতত্র থুতু বা পিক ফেলছেন। সেটা বুঝতে না পারলে এই অভ্যাস বন্ধ করার লড়াইয়ে জেতা কখনই সম্ভব হবে না।

রাজা ও প্রীতি নরসিমহা বলছেন, আমরা জানি আমরা সময় নষ্ট করছি। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমরা যদি মাত্র ২% মানুষের অভ্যাসও বদলাতে পারি, তাহলেও বুঝব আমরা কিছু করতে পেরেছি।  

সূত্র : বিবিসি। 

এনএফ