যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল হিলে উন্মত্ত সমর্থকদের হামলার প্রথম বর্ষপূর্তিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এসময় তিনি তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘মিথ্যার জাল’ ছড়ানোর দায়ে অভিযুক্ত করেন, যেটা মূলত ক্যাপিটলে হামলাকে অনিবার্য করে তোলে।

ক্যাপিটলে হামলার প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জো বাইডেন একথা বলেন। তার ভাষায়, মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতীক ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের গলায় ছুরি ধরেছিল। তারা (দাঙ্গাবাজরা)  কেবল একজন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিল করতেই ওই হামলা করেছিল।

বৃহস্পতিবার জো বাইডেন ক্যাপিটল হিলের স্ট্যাচুয়ারি হল থেকে এক বছর আগের ন্যাক্কারজনক ওই হামলার বিষয়ে ভাষণ দেন। ক্যাপিটল হিল কমপ্লেক্সের এই অংশটিও ট্রাম্পপন্থি দাঙ্গাকারীদের হামলার শিকার হয়েছিল।

বক্তব্যে জো বাইডেন বলেন, তিনি মার্কিন গণতন্ত্রকে হত্যা করতে দেবেন না। দেশের ক্ষমতার পালাবদল হবে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে। মার্কিন গণতন্ত্রকে নিরাপদে রাখা তাই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলোর মধ্যে পড়ে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা ছিল একটি সশস্ত্র দাঙ্গা। নাম না করে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন প্রেসিডেন্ট শুধু নির্বাচনে হেরে যাননি। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়াও রোধ করেছিলেন। তার ক্রোধ এমন ছিল- যা আমেরিকানদের গলায় ছুরি ধরেছিল। তবে তিনি গণতন্ত্রকে এভাবে হত্যা করতে দেবেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাইডেন।

ভাষণে ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট এদিন স্পষ্ট করে বলেন, আমেরিকা রাজনৈতিক সংহিংসতাকে কোনো দিনই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে না।

সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার দেওয়া ভাষণে বাইডেন একবারের জন্যও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু তিনি কার সম্পর্কে কথাগুলো বলছেন তা একাধিকবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

এছাড়া নির্বাচনী পরাজয় থেকে বেরিয়ে আসতে প্রতারণার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালে মার্কিন নির্বাচনে একটি মিথ্যার জাল তৈরি করে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। নীতির চেয়ে ক্ষমতাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং উচ্চকক্ষ সিনেট সদস্যদের যৌথ অধিবেশন বসেছিল। অধিবেশন চলাকালে সেখানে হামলা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক হাজার উন্মত্ত সমর্থক। ওই দাঙ্গায় পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয়েছিলেন ৫ জন।

ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে হওয়া এই হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের সরাসরি উসকানি ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ট্রাম্প এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। এই ঘটনার পর সমালোচনার মুখে ক্যাপিটল পুলিশের প্রধান পদত্যাগ করেছিলেন।

টিএম