একসাথে ডেল্টা ও ওমিক্রণের বৈশিষ্ট্য বহন করা করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেল্টাক্রন’ ল্যাবের ত্রুটি থেকে জন্ম নেয়নি বলে দাবি করেছেন এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তকারী সাইপ্রাসের বিজ্ঞানী ডা. লিওনডিওস কোস্ট্রিকিস।

এর আগে, রোববার ইউনিভার্সিটি অব সাইপ্রাসের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড মলিকিউলার ল্যাবরেটরির এই অধ্যাপক করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টাক্রন শনাক্তের দাবি করেন। কিন্তু কোস্ট্রিকিসের এই আবিষ্কার ল্যাবরেটরিতে দূষণের কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন অন্যান্য বিজ্ঞানীরা।

রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে ডা. লিওনডিওস কোস্ট্রিকিস বলেছেন, তিনি ডেল্টাক্রনের যেসব সংক্রমণ শনাক্ত করেছেন, তাতে এসব মিউটেশন অর্জনের জন্য করোনার আগের বংশগত প্রজাতির বিবর্তনীয় চাপের ইঙ্গিত রয়েছে এবং একক পুনর্মিলনের ফল নয় এই ভ্যারিয়েন্ট।

কোস্ট্রিকিস বলেছেন, যারা হাসপাতালে ভর্তি হননি তাদের তুলনায় করোনার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ডেল্টাক্রনের সংক্রমণ বেশি। যে কারণে ল্যাবরেটরিতে দূষণের পূর্বানুমাণ সঠিক নয়।

আরও বিষয় হলো, নমুনাগুলো একাধিক দেশে বহুমুখী সিকোয়েন্সিং পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছিল। এমনকি ইসরায়েলের একটি জিনগত বিন্যাসে বৈশ্বিক ডেটাবেইজে জমা হওয়া ডেল্টাক্রনের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘ডেল্টাক্রন টেকনিক্যাল ভুলের ফল বলে যে নথিবিহীন বিবৃতি আসছে সেটি বাতিল করে দিয়েছে এই গবেষণা।’

এর আগে শনাক্ত হওয়া করোনার ওমিক্রন ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের স্পাইক প্রোটিনে অনেকবার মিউটেশন ঘটেছে। যা এই ভাইরাসকে মানবদেহের কোষে প্রবেশ করার সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রামক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

একাধিক ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভাইরাসের পুনর্মিলনের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের মাইক্রোবায়াল জেনোমিকসের অধ্যাপক নিক লোমান। তিনি বলেছেন, ডেল্টা ও ওমিক্রনের সংমিশ্রিত নতুন ধরন আশ্চর্যজনক নয়। তবে সাইপ্রাসের গবেষণার ফল টেকনিক্যাল ভুলের কারণেও হতে পারে। এটি ভাইরাল জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সময় উদ্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রোববার সাইপ্রাসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিকালিস হাজিপ্যানডেলাস বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টটি উদ্বেগজনক নয়। চলতি সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনে এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।

গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো করোনার অতি-সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনার বি.১.১.৫২৯ নামের এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়ংকর’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

গত শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস অতিসংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনকে মৃদু বা হালকা বলার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

তিনি বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটি বিশ্বজুড়ে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা ধরনের তুলনায় বিপজ্জনক না হলেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে মৃদু ভাবার কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য।

সূত্র: ব্লুমবার্গ।

এসএস/জেএস