প্রতিবেশী আফগানিস্তানে সরকার হিসাবে তালেবানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে তেহরান এখনও কিছুটা দূরে রয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তেহরানে এক বৈঠকের পর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ বলেছেন, রোববার তালেবানের প্রতিনিধিদের সাথে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনা ইতিবাচক ছিল। তবে ইরান এখনই তালেবানকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর্যায়ে নেই।

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের; এই উদ্বেগ থেকেই আফগান প্রতিনিধিরা ইরান সফর করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।

কাবুলের ক্ষমতাসীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি নেতৃত্বাধীন তালেবানের প্রতিনিধি দল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান তেহরানের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

গত বছরের আগস্টের মাঝের দিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক বাহিনীর বিশৃঙ্খলাপূর্ণ প্রত্যাহারের পর দেশটিতে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতন ঘটে। এরপর প্রথমবারের মতো তালেবানের প্রতিনিধিরা ইরান সফর করলেন।

কাবুলের পতনের পর ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়। দেশটি তখন থেকেই বলে আসছে, আফগানিস্তানের নতুন সরকার যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, তবেই ইরান সেই সরকারের স্বীকৃতি দেবে। সেই সময় থেকেই ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে তালেবান। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার আফগানিস্তান সফর করেছেন ইরানের বিশেষ দূত হাসান কাজেমি-কোমি।

ভুল বোঝাবুঝি থেকে সীমান্ত সংঘাত

রোববারের বৈঠকের আগে উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবহন এবং শরণার্থী সংকট নিয়ে আলোচনা করতে চায়।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, তালেবানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তানে গত কয়েক দশকের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের ভুল নীতির সমালোচনা করেছেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তিনি বলেছেন, মানবিকতার ভিত্তিতে এবং আফগান জনগণ ও অর্থনীতিকে সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।

প্রতিবেশী এই দেশটিতে ইরান মানবিক সহায়তা পাঠানো অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রবল উৎসাহী জনগণের প্রচেষ্টা প্রমাণ করেছে যে, কোনও বিদেশি শক্তি আফগানিস্তান দখল এবং জনগণকে শাসন করতে পারবে না।

১৯৯৮ সালে তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানে ইরানের কনস্যুলেট অবরুদ্ধ করার সময় মাজার-ই-শরিফে তেহরানের কূটনীতিকরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন; বৈঠকে সেই কথাও আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক অফিসগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন তালেবানের।

গত মাসে হিরমান্দের সীমান্ত এলাকায় ইরানের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। পরে উভয়পক্ষ  ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই সংঘর্ষ হয়েছে বলে বিবৃতি দেয়। 

রোববারের বৈঠকে আফগানিস্তানের নতুন সরকার প্রতিবেশী কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয় বলে তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি জানিয়ে দিয়েছেন। হেলমান্দ নদীর পানির ভাগাভাগি নিয়ে পরবর্তীতে উভয় দেশের কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে আবারও বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন।

সূত্র: আলজাজিরা।

এসএস