কাজাখস্তানে আমাদের বিজয় হয়েছে: পুতিন
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় অরাজকতা-অস্থিরতা চলার পর শান্ত হয়ে এসেছে কাজাখস্তান। সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলার সময় দেশটিকে সেনা সহায়তা দেওয়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বর্তমান শান্তির কৃতিত্ব কাজাখস্তানের সরকার ও কাজাখ-রুশ যৌথ বাহিনীর।
সোমবার প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সামরিক জোট কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে পুতিন বলেন, ‘সন্ত্রাসী, অপরাধী ও লুটেরাদের আক্রমণ থেকে কাজাখস্তান রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি ও জনগণকে রক্ষা করেছে কাজাখ-রুশ সেনাবাহিনী।’
বিজ্ঞাপন
‘কাজাখস্তানে সম্প্রতি যা ঘটল, তাতে এটি পরিষ্কার যে বাইরের শক্তি আমাদের সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে; কিন্তু কাজাখস্তানে সিএসটিও স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরা বাইরের কোনো শক্তিকে আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে দেব না।’
এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে এক সপ্তাহ কাজাখস্তানের বৃহত্তম শহর আলমাতিসহ দেশজুড়ে চলা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনের পর শান্ত হয়ে আসছে দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি। সোমবার প্রায় স্বাভাবিক জীবনচিত্র দেখা দেছে কাজাখস্তানজুড়ে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সড়ক থেকে পোড়াগাড়ির ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ করছেন, দেশটির অধিকাংশ দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে, যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে এবং ইতোমধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় ফিরেছে ইন্টারনেট সংযোগ।
সরকার এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ানোয় গত সপ্তাহেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল কাজাখস্তানের পরিস্থিতি। বছরের প্রথম দিন জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির সরকারি ঘোষণা দেওয়ার একদিন পরই, ২ জানুয়ারি দেশটির মানজিস্তাউ শহরে শুরু হয় বিক্ষোভ। পরে তা আলমাতিসহ পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ সহিংস রাজনৈতিক সংঘাতে রূপ নেয় এই বিক্ষোভ।
সরকার ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের যুদ্ধ শুরু হয় বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি)। কাজাখ পুলিশের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, দেশটির প্রধান শহর আলমাতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি বিভিন্ন দফতর ও পুলিশ স্টেশন দখল করার চেষ্টা চালালে বাধ্য হয়ে গুলি ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা বন্দুক হামলা শুরু করে।
জনতার রোষ শান্ত করতে ৫ জানুয়ারি দেশটির প্রধানমন্ত্রী আসকার মমিন মন্ত্রিপরিষদসহ পদত্যাগ করেন। তারপর জরুরি অবস্থা জারি করা হয় দেশজুড়ে, ঘোষণা করা হয় রাত্রিকালীন কারফিউ; কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
দাঙ্গা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিতে থাকায় কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও) চুক্তির আওতায় রাশিয়াকে সেনা সহায়তা পাঠাতে অনুরোধ করেন।
সেই অনুযায়ী, ০৬ জানুয়াডির রুশ সেনাদের প্রথম দলটি কাজখস্তানে পৌঁছায়। এই দলে ছিলেন প্রায় আড়াই হাজার সেনা সদস্য।
সোমবারের ভার্চুাল বৈঠকে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ বলেন, ‘স্বতস্ফুর্ত বিক্ষোভের সুযোগে কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশজুড়ে সহিংসতা শুরু করেছিল। এরা সবাই বিদেশি মদদপুষ্ট। তাদের মূল লক্ষ্যছিল সহিংসতার মাধ্যমে সাংবিধানিক অনুশাসনের অবসান ঘটানো ও রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা।’
কাজাখস্তানের গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সংঘাতের জন্য দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নাজারবায়েভের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোভিয়েত ইউনিয়েন ভেঙে যাওয়ার পর প্রায় ৩০ বছর একচ্ছত্রভাবে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে থাকার পর তিন বছর আগে, ২০১৯ সালে ক্ষমতা থেকে অবসর নেন। তবে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান ছিলেন ছিলেন নাজারবায়েভের ভাগ্নে করিম ম্যাসিমভ।
গতসপ্তাহে তাকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি গ্রেফতারও করা হয়। বর্তমানে কারাগারে আছেন মাসিমভ।
কাজাখস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা রাশিয়ার সংবাদসংস্থা তাস নিউজ এজেন্সিকে জানিয়েছেন, বলেন, গত সাতদিনের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনী ও বিক্ষোভকারী সহ মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৬৪ জনের।
এসএমডব্লিউ