ছবি: ব্লুমবার্গ

মহামারির ২ বছর পেরোনোর পর প্রাণঘাতী রোগ করোনা সম্পর্কিত প্রাথমিক ভীতি কাটিয়ে উঠছে ইউরোপ। মহাদেশের কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে কোভিডের সঙ্গে ‘সহাবস্থানের’ নীতি গ্রহণ করেছে।

এসব দেশের মধ্যে প্রথমেই আসে ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ স্পেন ও যুক্তরাজ্য। করোনাভাইরাসের সবচেয়ে সংক্রামক ধরনের স্বীকৃতি পাওয়া ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে এই দুটি দেশে প্রায় প্রতিদিনই লক্ষাধিক রোগী শনাক্ত হচ্ছেন করোনা পজিটিভ হিসেবে।

কিন্তু তারপরও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে রাজি নয় এই দেশ দু’টির সরকার। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ সোমবার একটি বেতার মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গত দুই বছরের মহামারি পরিস্থিতি ও সাম্প্রতিক বাস্তবতা পর্যালোচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বর্তমানে মহামারির অন্তিম পর্যায় চলছে। এখন যে সংক্রমণ বা অসুস্থতা দেখা যাচ্ছে- সেটি মহামারি নয়, বরং স্থানীয় রোগের আলামত।’  

তার আগের দিন রোববার যুক্তরাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী নাদিম জাহাউই বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সরকারিভাবে করোনাকে মহামারির পরিবর্তে স্থানীয় রোগ হিসেবে ঘোষণা করার বিষয়টি বিবেচনাধীনে রয়েছে। আমরা সে পথেই হাঁটছি।’

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ রোগে প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।

তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

তারপর গত দুই বছরে সার্স-কোভ-২ বা মূল করোনাভাইরাস ও আলফা, বিটা, গ্যামা ও ডেল্টাসহ এই ভাইরাসটির বিভিন্ন পরিবর্তিত ধরনের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩১ কোটি ৪৩ লাখ ৩৫ হাজার ১১৭ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ৫৫ লাখ ২৩ হাজার ৬১০ জন।

এর মধ্যেই ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর দক্ষিন আফ্রিকায় শনাক্ত হয় করোনাভাইরাসের নতুন রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন, যা ইতোমধ্যে ভাইরাসটির সবচেয়ে সংক্রামক ধরনের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মূল করোনাভাইরাসের তুলনায় এই ভাইরাসটি ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক।

ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৩০ টিরও বেশি দেশে শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউরোপের দেশগুলোতে রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছে ওমিক্রন।

কিন্তু তারপরও স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে- এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে যতদূর সম্ভব নিজেদের বিরত রাখছে এই মহাদেশের অধিকাংশ দেশ।

উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, ইউরোপের যেসব দেশে করোনা শনাক্তের হার সর্বোচ্চ, তাদের মধ্যে অন্যতম আয়ারল্যান্ড ও বেলজিয়াম। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিশেল মার্টিন সম্প্রতি এক ভাষণে বলেছেন-লকডাউন জারি করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই, উপরন্তু টিকা গ্রহণের বিষয়টিকেও দ্রুত ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

একই ঘোষণা দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার জি ক্রু। তিনি বলেছেন, বেলজিয়াম সরকার টিকা নেওয়ার বিষয়ে জনগণের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিতে চায়।

এছাড়া ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ কমিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ এই তালিকায় নাম লিখিয়েছে চেক রিপাবলিক। মঙ্গলবার দেশটিতে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ ঘোষণা করা হয়েছে ৫ দিন, যা আগে ছিল দুই সপ্তাহ।

তবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। বর্তমানে ওমিক্রণের প্রভাবে যুক্তরাজ্যে লাগামহীন ভাবে আক্রান্ত রোগী বাড়লেও সেই আদেশে কোনো পরিবর্তন আনেনি দেশটির সরকার।

আবার, যুক্তরাজ্যে করোনার ঢেউ দেখা দেওয়ায় দেশটির সঙ্গে বিমান ও স্থল ও নৌ যোগাযোগ সীমিত করেছিল ফ্রান্স। এখনও তা বহাল রেখেছে দেশটি।

সূত্র: ব্লুমবার্গ

এসএমডব্লিউ