আধুনিক চীন প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছরের মাথায় দেশটিতে সর্বনিম্ন জন্মহারের মুখোমুখি হয়েছে বেইজিং প্রশাসন। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) চীনের সরকারি পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে করে চীনা দম্পতিদের অধিক সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করার কর্মসূচিও কার্যত ফলহীন হয়ে উঠেছে বলে দেখা যাচ্ছে। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস’র প্রকাশিত সোমবারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালে এশিয়ার এই দেশটিতে প্রতি হাজারে জন্মহার ছিল ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। যা চীনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে পরিসংখ্যান রাখা শুরুর পর থেকে এটিই সর্বনিম্ন জন্মহার। এছাড়া জনসংখ্যা বাড়াতে বেইজিং গত বছর ৩ সন্তান নীতি গ্রহণ করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি বলেই দেখা যাচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন গত শতকের সত্তরের দশকে এক সন্তান আইন চালু করেছিল। জন্মহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণই ছিল আইনের উদ্দেশ্য। এই আইনের আওতায় কোনো দম্পতি যদি একজনের বেশি সন্তান নিতেন, সেক্ষেত্রে ওই দম্পতিকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন হয়রানিতে পড়তে হতো।

দীর্ঘদিন আইনটি চালু রাখার ফলে একসময় দেশটির জন্মহারে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়া শুরু করে। বয়স অনুপাতে জনবিন্যাসের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয় এবং কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।

ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে ২০১৬ সালে কয়েক দশকের পুরোনো সেই আইন সংশোধন করে দুই সন্তান নীতি চালু করে চীন; কিন্তু আইন পরিবর্তন করা হলেও নিম্নমুখী জন্মহারের রেখচিত্র কাঙ্খিতমাত্রায় ঊর্ধ্বমুখী করা যায়নি।

এরপর আইনে ফের পরিবর্তন আনতে গত বছরের মে মাস থেকে তিন সন্তান নীতি চালুর চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে চীন। পরে গত আগস্টে তিন সন্তান নীতিও পাস করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

রয়টার্স বলছে, জনসংখ্যা বাড়াতে কয়েক দশকের পুরোনো আইন সংস্কার করে গত বছর চীনে তিন সন্তান নীতির অনুমোদন দেওয়া হলেও তাতে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি। কারণ দেশটিতে শহরে বসবাসের খরচ অত্যাধিক বৃদ্ধির কারণে দম্পতিরা বেশি সংখ্যক সন্তান জন্মদান থেকে বিরত থাকছেন।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস’র তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসন ছাড়া ২০২১ সালে কেবল স্বাভাবিক ভাবে চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ০.০৩৪ শতাংশ। যা ১৯৬০ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন।

পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিয়েই ঝাং বলছেন, ‘জনসংখ্যা-বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু বয়স্ক মানুষের সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়েও স্পষ্টভাবেই দ্রুত বাড়ছে।’

তার মতে, ‘এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যাচ্ছে যে, ২০২১ সালেই হয়তো চীনের মোট জনসংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছিয়ে থাকতে পারে। এটিও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, চীনের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি হয়তো প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে কমছে।’

চীনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশটিতে এক কোটি ৬ লাখের কিছু বেশি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল এক কোটি ২০ লাখ। অন্যদিকে ২০২০ সালে চীনে প্রতি হাজারে জন্মহার ছিল ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।

টিএম