বিশ্বের একমাত্র সংস্থা যার ব্যবসা প্রতি তিন বছর অন্তর দ্বিগুণ বেড়ে যায়। গত ছয় দশকে প্রতি বছর আয়ও বেড়েছে ২০ শতাংশ করে। বলা হয়, পৃথিবীতে আর কোনো সংস্থার এমন সাফল্য নেই। আর এই সংস্থার মালিক একজন ভারতীয়। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি সুপার কম্পিউটার কিনেছিলেন।

সফল এই ব্যবসায়ী হলেন এশিয়ান পেইন্টসের মালিক চম্পকলাল চোক্সি। ১৯৭০ সালে ৮ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন তিনি সুপার কম্পিউটার কেনার জন্য। শখে নয়, ব্যবসার কাজে লাগাবেন বলে।

রঙের ব্যবসায় বেশ সফল চম্পক। ১৮ বছরের পুরনো রঙের কোম্পানি ‘এশিয়ান পেইন্টস’ থেকে বছরে তার আয় ২৩ কোটি টাকা। প্রাইভেট থেকে পাবলিক লিমিটেডেও উত্তরণ হয়েছে সংস্থার। কিন্তু চম্পক সেখানে থেমে থাকতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন ব্যবসা আরও বড় করতে। কিন্তু সেটা কীভাবে? সেই প্রশ্নের জবাব ছিল— সুপার কম্পিউটার।

তিনি ঠিক করেন গ্রাহকের যাবতীয় তথ্য কম্পিউটারে জমা রাখবেন। তারপর সুপার কম্পিউটারই বলে দেবে কোন এলাকার গ্রাহক কোন সময়ে কী রঙ কিনতে আসবেন। এ তথ্য জানা থাকলে সময় মতো গ্রাহককে চাহিদার সময় মতো জিনিস পৌঁছে দিতে পারলেই সাফল্য আসবে।

গত ছয় দশক ধরে প্রতি বছর ২০ শতাংশ করে উপার্জন বেড়েছে এশিয়ান পেইন্টসের। এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক সংস্থা অ্যামাজনেরও এমন রেকর্ড নেই।

চম্পক তার বিশ্বস্ত সুপার কম্পিউটারের ভরসাতেই সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঠিক করেন গ্রাহকদের কাছে তার সংস্থার তৈরি রঙ পৌঁছে দিতে তিনি আর ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোল সেলারদের ওপর ভরসা করবেন না।

সাধারণত সংস্থার উৎপাদনজাত পণ্য ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোল সেলারদের কাছে মজুত করা থাকে। গ্রাহক কী ধরনের জিনিস চান তা ডিলার জানালে, প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে যায় ডিলারের কাছে। চম্পক দেখেন, এই প্রক্রিয়ায় রঙের দামের ২০ শতাংশ দিতে হয় ডিস্ট্রিবিউটরদের। হোল সেলারদের কাছে যায় আরও ১০ শতাংশ। এরপর ডিলারদের ভাগ দিয়ে সংস্থার হাতে আসে রঙের দামের ৬০ শতাংশ। ফলে কম লাভ। চম্পক গোটা প্রক্রিয়াটাই বদলে দেন।

তিনি ঠিক করেন ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোলসেলারদের তিনি মাঝে রাখবেন না। তার সংস্থা সরাসরি যোগাযোগ রাখবে ডিলারদের সঙ্গে। ডিলারদের রঙ মজুত রাখার জায়গা বা ক্ষমতা নেই। চম্পক জানিয়ে দেন মজুত করার দরকারও নেই। ডিলারের কাছে যে রঙ পৌঁছানো দরকার তা সময়মতো পৌঁছে দেবে তার সংস্থাই। এমনকি রং বিক্রি না হলে তা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থাও করবে। চম্পক জানান, প্রতি তিনঘণ্টা অন্তর দিনে চার বার সংস্থার গাড়ি যাবে ডিলারের কাছে। তারাই এই কাজ করবে।

জানা গেছে, চম্পক যখন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তখন এশিয়ান পেইন্টসের ৪০ হাজার ডিলার। তাঁদের কাছে দিনে চার বার পৌঁছানো মানে দিনে ১ লাখ ৬০ হাজার বার গাড়ি পৌঁছাবে ডিলারের কাছে। চম্পক এই হিসেব করেননি তা নয়, তবে পিছিয়ে আসেননি। কারণ তিনি জানতেন বিষয়টি অসম্ভব নয়। কেনো না তার সুপার কম্পিউটারে তথ্য আছে।

৫০ বছর ধরে গ্রাহকদের পছন্দ অপছন্দের হিসাব সংরক্ষণ করেছে সুপার কম্পিউটার। কোন রঙের বিক্রি সর্বাধিক, কোন রং কত পরিমাণে বিক্রি হয়, কোন রঙের কোন আকারের টিনের সবচেয়ে বেশি চাহিদা এ সব তথ্য রয়েছে চম্পকের সুপার কম্পিউটারে। ফলে ভুলের জায়গা নেই।

এমনকি অকারণ রং মজুত করারও দরকার নেই। ডিস্ট্রিবিউটর এবং হোলসেলারদের তাই অনায়াসেই পাশ কাটাতে পেরেছে এশিয়ান পেইন্টস। রঙের দামের ৩ শতাংশ ডিলারদের দিয়ে বাকি ৯৭ শতাংশই ঘরে তোলে এই সংস্থা।

এশিয়ান পেইন্টসই ভারতে এক মাত্র সংস্থা যারা উৎপাদিত পণ্যের ৯৭ শতাংশ মূল্যই নিজেরা পায়। যাদের পণ্য মজুতকরণের উপর নির্ভর করতে হয়, তাদের হাতে আসে মোট পণ্য মূল্যের ৬০ শতাংশ।

এমএইচএস