প্রতীকী ছবি

নিজের ঘর আর নিজের বাড়ি সবার কাছেই স্বপ্ন। প্রিয় এই স্বপ্নটি যাদের পূরণ হয়, তারা নিজেদের সাধ্যের সর্বোচ্চটা দিয়েই বাড়িটাকে সাজিয়ে তোলেন। তেমনই খুব যত্ন করে নিজেদের ফ্ল্যাট সাজিয়েছিলেন এক পরিবার। চার ভাই এক সঙ্গে থাকতেন সেই ফ্ল্যাটে।

কিন্তু অনেক যত্ন ও খরচ করে সাজানো সেই ফ্ল্যাটে একটি খুঁত ছিল। যা কি না তাদের শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায় আদালতের দরজায়। সেটিও আবার প্রতিবেশীদের অভিযোগের ভিত্তিতে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, ২০০৩ সালে ইতালির জেনোয়া শহরে চার ভাই মিলে তৈরি করেছিলেন এক বাড়ি। সেই বাড়িতে বিপুল খরচ করে বসিয়েছিলেন কমোড। কিন্তু সেই কমোডের ফ্লাশের আওয়াজও নেহাত কম নয়। ওই ফ্ল্যাটেরই পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন এক দম্পতি।

তাদের অভিযোগ, রাত্রিবেলায় পাশের ফ্ল্যাটের কমোডের ফ্লাশে এতো জোরে আওয়াজ হয় যে তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। প্রতিদিনই রাতে এমন ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত দম্পতি কোনো উপায় না পেয়ে শেষে আদালতের দ্বারস্থ হন।

অবশ্য আদালতে যাওয়ার আগে ওই দম্পতি সেই চার ভাইয়ের কাছে কিছু একটা ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। বিপুল খরচ করে বানানো টয়লেটে কোনো পরিবর্তন করতে রাজি হননি ওই চার ভাই। ফলে বিষয়টি চূড়ান্তভাবে আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

ভুক্তভোগী ওই দম্পতির দাবি, পাশের ফ্ল্যাটের কমোডের ফ্লাশের আওয়াজ কমাতে হবে এবং একইসঙ্গে এই আওয়াজের কারণে এতোদিন তাদের যে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছে তারও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কিন্তু দ্রুত এই অভিযোগের নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করা হলেও তেমনটি হয়নি। প্রথম দফায় জেনোয়ার আদালত এই মামলাটি খারিজ করে দেয়। এরপর ওই দম্পতি উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হন। সেখানেও বিশেষ লাভ হয়নি। এভাবেই চলতে থাকে। অবশেষে গত বছর তারা সিদ্ধান্ত নেন, বিষয়টি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার। সেখানে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয় শেষ পর্যন্ত।

সম্প্রতি কমোডের ফ্লাশ নিয়ে করা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ইতালির সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, বাথরুমে বিকট শব্দ হলে, তা ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটসের মানদণ্ড অনুযায়ী মানবাধিকার লঙ্ঘন। এভাবে কাউকে অতিষ্ঠ করা উচিত নয়। দ্রুত টয়লেটের কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে এবং সেখান থেকে যেন বিকট শব্দ না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে ওই চার ভাইকে।

রায়ে আদালত আরও বলেছেন, কমোডের ফ্লাশের আওয়াজ দম্পতির জীবনের ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে। যা কখনোই হওয়া উচিত নয়।

প্রায় ২০ বছরের মাথায় এসে অবশেষে আদালতের রায়ে স্বস্তি পেয়েছেন ইতালির ওই দম্পতি। অন্তত এখন থেকে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন তারা।

টিএম