ন্যাটোর মহাপরিচালক জিনস স্টলটেনবার্গ, ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া ও ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশ ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই পূর্ব ইউরোপে সেনাবহর, যুদ্ধজাহাজ ও বোমারু বিমান পাঠিয়েছে পাশ্চাত্য দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্স (ন্যাটো)। জোটের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

ন্যাটোর মহাপরিচালক জিনস স্টলটেনবার্গ সোমবার এক বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলেন, ‘যেসব দেশ ন্যাটোতে তাদের সেনা বাহিনী ও যুদ্ধযান পাঠিয়েছেন তাদের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবেই সকল মিত্রকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ গ্রহণ করা অব্যাহত রাখবে ন্যাটো।’

রাশিয়ার সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এই ন্যাটোকে ঘিরেই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ট মিত্র ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই দিন দিন তিক্ত হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।

রাশিয়ার একমাত্র সামুদ্রিক জলপথ কৃষ্ণ সাগর। এই সাগরের উপকূলবর্তী অপর দেশ ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে ন্যাটোর তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে এবং এটি কখনওই রাশিয়ার কাম্য নয়। বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবেই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্যের বিরোধী।

ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন ফিরিয়ে নিতে প্রথমে ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন সরকারকে চাপ দিয়েছে দিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে গত মাসে ১ লাখেরও বেশি সেনা সদস্য মোতায়েন করেছিল দেশটি।

চলতি মাসে যদিও তাদের অধিকাংশকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনও সীমান্তে অবস্থান করছে ১০ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা।

এদিকে, সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েনের পর থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি হুমকি দিয়ে বলেছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়- সেক্ষেত্রে এমন কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেশটির ওপর জারি করা হবে, যা ‘অতীতে কখনও দেখেনি’ মস্কো।

রাশিয়া অবশ্য বলেছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত মস্কোর নেই।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন থেকে তাদের কূটনীতিকদের ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার এ সম্পর্কে রয়টার্সকে জানান, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের হুমকি দিন দিন বাড়তে থাকায় এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

আর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘রাশিয়া যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে এবং যদি তা শুরু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ইউক্রেনে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান খুবই কঠিন হয়ে যাবে। তাই পর্যায়ক্রমে ওই দেশটি থেকে মার্কিন নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

কূটনীতিকদের ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করায় অবশ্য ক্ষোভ জানিয়েছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্তকে ‘অপরিণত’ ও ‘বাড়াবাড়ি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের কূটনৈতিক তিক্ততা শুরু হয়েছে এবং গত বছরের এপ্রিল থেকে সীমান্তে রুশ সেনারা অবস্থান করছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে এমন কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি যে, ইউক্রেন থেকে কূটনীতিকদের প্রত্যাহার করে নিতে হবে।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের প্রধান জোসেপ বরেল অবশ্য বলেছেন, এখনই ইউক্রেন থেকে কূটনীতিক প্রত্যাহারের ব্যাপারে ভাবছে না ইইউ।

এসএমডব্লিউ