ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সেনাকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রয়োজন হলে স্বল্প সময়ের নোটিশে এসব সেনাকে ইউরোপে মোতায়েন করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এর আগে রাশিয়া ও ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশ ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই পূর্ব ইউরোপে সেনাবহর, যুদ্ধজাহাজ ও বোমারু বিমান পাঠায় পাশ্চাত্য দেশগুলোর সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)।

সোমবার এক বিবৃতিতে ন্যাটোর মহাপরিচালক জনস স্টলটেনবার্গ বলেন, যেসব দেশ ন্যাটোতে তাদের সেনা বাহিনী ও যুদ্ধযান পাঠিয়েছেন তাদের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবেই সকল মিত্রকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষপ গ্রহণ করা অব্যাহত রাখবে ন্যাটো।

এরপরই রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই ইউরোপে মোতায়েনের জন্য সেনা প্রস্তুত রাখার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। সোমবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, সাড়ে আট হাজার মার্কিন সেনাকে যেকোনো মুহূর্তে মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। মূলত তারা ন্যাটোর র‌্যাপিড রেসপন্স টিম হিসেবে মোতায়েন হবে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন চান, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যও অনির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা তৈরি থাকুক।

সংবাদ সম্মেলনে জন কিরবি আরও বলেন, এখন যেটা হচ্ছে তা হলো, (প্রয়োজন হলে) স্বল্প সময়ের মধ্যে মোতায়েনের জন্য সেনাদের প্রস্তত রাখা। আজ আমরা সেনা মোতায়েনের আদেশ নিয়ে কথা বলছি না। (আপনাদের কাছে) বলার মতো কোনো সেনা মোতায়েন সম্পর্কিত আদেশও আমাদের কাছে নেই।

পেন্টাগন অবশ্য এখনই এসব সেনাকে ইউক্রেনে পাঠানোর কোনো কথা উল্লেখ করেনি। পেন্টাগনের মুখপাত্র বলেছেন, এসব সেনাকে শুধুমাত্র তখনই ইউক্রেনে পাঠানো হবে যখন ন্যাটো জোট ‘তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর’ সিদ্ধান্ত নেবে অথবা ইউক্রেন সীমান্তে জরুরি কোনোকিছু ঘটবে।

তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এর মাধ্যমে তার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এই ন্যাটোকে ঘিরেই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ট মিত্র ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই দিন দিন তিক্ত হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।

এর অগে রোববার ইউক্রেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে নিযুক্ত কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশটি ত্যাগের নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। পূর্ব ইউরোপে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই নতুন এই নির্দেশনা জারি করে ওয়াশিংটন।

এছাড়া পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির দূতাবাসে অবস্থান করা অপ্রয়োজনীয় কর্মীদেরও ইউক্রেন ছাড়তে বলা হয়। এমনকি ইউক্রেনে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদেরও দেশটি ছাড়ার কথা বিবেচনা করার অনুরোধ জানায় ওয়াশিংটন।

উল্লেখ্য, ইউক্রেন সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই প্রায় এক লাখ সেনাসদস্য মোতায়েন করে রেখেছে প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া। যেকোনো মুহূর্তে রুশ সেনারা দেশটিতে আক্রমণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। যদিও ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।

টিএম