করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ ভেঙে মদপার্টির আয়োজন নিয়ে এমনিতেই বিতর্কের মধ্যে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। বেশে জোরেশোরে উঠেছে তার পদত্যাগের দাবিও। আর এবার জনসনের বিরুদ্ধে উঠেছে নতুন অভিযোগ।

বলা হচ্ছে, লকডাউনের মধ্যে করোনার বিধি ভেঙে নিজের জন্মদিনের পার্টিও করছিলেন ব্রিটেনের এই প্রধানমন্ত্রী। সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিস জনসনের বিরুদ্ধে আগেই করোনার বিধি ভেঙে পার্টি করার অভিযোগ উঠেছে। তবে সেটা ছিল অফিস পার্টি। সেই অভিযোগ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে তদন্তও চলছে। এই অবস্থায় লকডাউনের মধ্যে করোনার বিধি ভেঙে নিজের জন্মদিনের পার্টি করার অভিযোগ উঠেছে জনসনের বিরুদ্ধে।

মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর প্রথম লকডাউনে যখন সব ধরনের পার্টি করা নিষিদ্ধ ছিল, তখন ২০২০ সালের জুন মাসে জনসন জন্মদিনের পার্টি করেন। সেখানে ৩০ জন আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই জনসনের জন্মদিনের হ্যাপি বার্থডে গানে সুর মেলান এবং পরে তাদের সবাইকে কেক পরিবেশন করা হয়। ব্রিটেনের আইটিভি জনসনের এই জন্মদিন পার্টির খবর ফাঁস করেছে।

আইটিভি বলছে, জন্মদিনের এই পার্টি যখন আয়োজন করা হয়েছিল জনসন তখনও ক্যারি সাইমন্ডসকে বিয়ে করেননি। ক্যারিই ২০২০ সালের ১৯ জুন জনসনের ৫৬তম জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করেন। ৩০ জন কর্মী সেই পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।

রিপোর্ট অনুযায়ী, পার্টি আধঘণ্টা চলেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। জনসনের জন্য ক্যারি একটা কেক এনেছিলেন। উপস্থিত সকলে হ্যাপি বার্থডে গান করেন। মহামারির সেই পর্যায়ে ব্রিটেনে আরোপিত বিধিনিষেধ অনুযায়ী মাত্র ছয়জন একসঙ্গে সমবেত হতে পারতেন। আর ঘরের ভেতরে জমায়েত পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল।

আইটিভি এই পার্টির খবর প্রকাশ্যে আনার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর সেটি স্বীকারও করে নিয়েছে। ডাউনিং স্ট্রিট জানিয়েছে, একটা বৈঠকের পর কর্মীরা সামান্য সময়ের জন্য সমবেত হয়েছিলেন। জনসন সেখানে দশ মিনিটের মতো উপস্থিত ছিলেন।

তবে সন্ধ্যায় জনসন আরেকটি পার্টি করেছিলেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেটি অস্বীকার করেছে তার অফিস। বলা হয়েছে, তিনি দফায় দফায় পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন।

বরিস জনসনের দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে একদল কর্মী সামান্য সময়ের জন্য কেবিনেট রুমে মিলিত হন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানান। জনসন সেখানে দশ মিনিটেরও কম সময় ছিলেন।’

লকডাউনে পার্টি করা নিয়ে এটি হলো জনসনের বিরুদ্ধে সর্বশেষ অভিযোগ। এর আগে বহু সংখ্যক অতিথি নিয়ে মদ-পার্টির আয়োজন করে আগেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। দুই সপ্তাহ আগে প্রথমবারের মতো এসব পার্টির তথ্য সামনে আসে।

করোনা মহামারির কারণে আরোপ করা লকডাউনের মধ্যে আয়োজিত পার্টির যে ঘটনাটি নিয়ে প্রথম বিতর্কের সৃষ্টি হয় সেটি ২০২০ সালের মে মাসের। যুক্তরাজ্যজুড়ে সেসময় লকডাউন চলছে। সংক্রমণ রুখতে জনসমাবেশ ও পার্টিসহ সবকিছুর ওপরই সেসময় নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। সেই বছর ২০ মে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ৪০ জনকে নিয়ে গার্ডেন পার্টি করেছিলেন বরিস জনসন।

অবশ্য করোনা সংক্রমণ রুখতে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, সে সময় সর্বোচ্চ মাত্র দু’জন বাড়িতে মিলিত হতে পারতেন। বার, রেস্তোরাঁ সব বন্ধ। আর সেই সময়েই কি না জনসন এই পার্টি করেন।

প্রধানমন্ত্রী জনসনের প্রিন্সিপাল প্রাইভেট সেক্রেটারি মার্টিন রেনল্ডস আমন্ত্রণমূলক একটি ইমেইল ১০০ জনেরও বেশি কর্মীকে পাঠিয়েছিলেন। সেই ইমেইলে বলা হয়েছিল, ‘ভয়ংকর ব্যস্ত সময়ের পর সুন্দর আবহাওয়ার সুযোগ নিন। আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে ১০ নম্বরের বাগানে সন্ধ্যায় জড়ো হবো। দয়া করে ৬টার সময় আসবেন এবং নিজের মদ নিজে নিয়ে আসবেন।’

অবশ্য ‘নিজের মদ নিজে আনো’ পার্টির জন্য পার্লামেন্টে ইতোমধ্যেই ক্ষমা চেয়েছেন জনসন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ওই পার্টিটি আসলে তার কাজের অংশ বলে মনে করেছিলেন তিনি।

পরে জানা যায়, ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগেও ডাউনিং স্ট্রিটের কর্মীরা দু’টি পৃথক পার্টি করেছিলেন। তবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জনসনের দাবি ছিল, লকডাউনের মধ্যে পার্টির আয়োজন নিয়ে কেউ তাকে সতর্ক করেনি।

টিএম