ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কি, ছবি: বিবিসি

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে অহেতুক ভীতি না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি। শুক্রবার রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমের কয়েকটি দেশের সম্মানিত নেতারা এমনভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, যেন আগামীকালই ইউক্রেনে হামলা ঘটবে। তাদের এই বিষয়ক বক্তব্য, উদ্বেগ ও সতর্কবার্তার ফলে ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে আমাদের কতটা মূল্য দিতে হবে? দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার জন্য এই ভীতি খুবই ক্ষতিকর।’

গত ডিসেম্বরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক রুশ সেনা মোতায়েনের পর থেকেই ইউক্রেনের পক্ষে সরব হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ন্যাটো। ইতোমধ্যে এই ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ঐক্যের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ।

এর মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন করেন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফোনালাপে জেলেনস্কিকে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ‘সুনিশ্চিত’ বা ‘অতিস্পষ্ট সম্ভাবনা’ আছে।

ইউক্রেন সীমান্তে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ রুশ সেনা অবস্থান করছে। তবে শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেছেন, গত বছর বসন্ত থেকেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করেছে রাশিয়া।

‘কেবল সেনা উপস্থিতির কারণে নিকট ভবিষ্যতে আগ্রাসন হতে পারে, আমরা এমনটা মনে করছি না’- সংবাদ সম্মেলনে বলেন জেলেনস্কি।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।

১৯৪৯ সালে গঠিত হওয়া নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগ্যানাইজেশনকে (ন্যাটো) রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপিত্যবাদের বিরোধী।

একসময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্র ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রুশ বংশোদ্ভূত। দেশটিতে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীও বেশ সক্রিয়। এই গোষ্ঠীর সশস্ত্র সহায়তায় ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া।

রাশিয়ার ভৌগোলিক নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের আরেকটি কারণ কৃষ্ণসাগর। এটি রাশিয়ার একমাত্র সামুদ্রিক জলপথ। এই সাগরের উপকূলবর্তী অপর দেশ ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ন্যাটোর তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে, যা রাশিয়ার জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সূত্র: বিবিসি

এসএমডব্লিউ/জেএস