জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান মিশেলে ব্যাশেলেট, ছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দফতরের প্রধান মিশেলে ব্যাশেলেটকে চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে সফরের অনুমতি দিয়েছে বেইজিং। চীনের জাতীয় দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদেনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়, বেইজিং অলিম্পিকের আসর শেষ হবে ২০ ফেব্রুয়ারি। তারপর যে কোনো দিন জিনজিয়াং সফরে আসতে পারেন ব্যাশেলেট।  

তবে এক্ষেত্রে বেইজিংয়ের শর্ত হলো- এই সফরভিত্তিক কেনো প্রতিবেদন তিনি বা তার দলের কোনো সদস্য লিখিত আকারে প্রকাশ করতে পারবেন না।

চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর ও তুর্কিক (তুর্কমেনিস্তানের মানুষ) বংশোদ্ভুত মুসলিমদের অধিকাংশেরই বসবাস জিনজিয়াং প্রদেশে। গত কয়েক বছর ধরে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ও জিনজিয়াং প্রাদেশিক সরকারি কর্মকর্তারা উইঘুরদের নির্যাতন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, জিনজিয়াংয়ের বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে উইঘুর জাতিগোষ্ঠীর প্রায় ১০ লাখ মানুষকে এবং সেখানে তাদের বাধ্যতামূলক শ্রমদান, প্রহার, অঙ্গছেদন, বন্ধ্যাকরণ ও উইঘুর নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ- জিনজিয়াংয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে চীন।

চীন অবশ্য বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, উইঘুর মুসলিমদের কোনো ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়নি। বরং তারা যেন ধর্মীয় কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকে না পড়ে, সেজন্য সেখানে তাদের বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে চীনের এই বক্তব্যে একেবারেই আস্থা রাখতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য মানবাধিকার সংস্থাসমূহ।

এই পরিস্থিতিতে গত বছর ফেব্রুয়ারির দিকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুরদের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে আসার জন্য জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তাব করে; তখন তাতে রাজি হয়নি চীন।

জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া উইঘুররা সেখানে ভয়াবহ অত্যাচার চলছে বলে জানিয়েছেন। গত বছর বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- জিনজিয়াংয়ে উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

উইঘুর মুসলিম প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক তিক্ততা ইতোমধ্যে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অনানুষ্ঠানিক স্বাধীন ট্রাইব্যুনাল রায়ে চীনকে উইঘুর মুসলিমদের গণহত্যার দায়ে চীনকে অভিযুক্ত করেছে; কিন্তু তারপরও এতদিন আগের অবস্থান থেকে সরেনি চীন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগের প্রধান ব্যাশেলেটও গত বছর থেকেই বলে আসছিলেন, তিনি একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি নিয়ে জিনজিয়াং সফরে যেতে চান।

অবশেষে শুক্রবার তাকে শর্তসাপেক্ষে সেই অনুমতি দিল বেইজিং।

সূত্র: রয়টার্স

এসএমডব্লিউ