ইসরায়েলি কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি স্মার্টফোনে আড়ি পাতার সফটওয়্যার স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’ নিয়ে কিছুদিন আগে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছিল। সেই আলোচনা-সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছিল ভারতের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার।

দেশটির সংসদ এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে জবাব এড়িয়ে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদির সরকার। এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’র এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ২০১৭ সালে ইসরায়েল থেকে ফোনে আড়ি পাতার স্পাইওয়্যার ‘পেগাসাস’ কিনেছিল ভারত।

‘দ্য ব্যাটল ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’স মোস্ট পাওয়ারফুল সাইবারওয়েপন’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মোদির সফরের সময় ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা নজরদারি সরঞ্জাম কিনতে ২০০ কোটি ডলারের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়েছিল। ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি সেই ‘প্রতিরক্ষা চুক্তির’ তালিকায় অন্যতম ছিল ফোনে আড়ি পাতার স্পাইওয়্যার পেগাসাস। এই পেগাসাস ব্যবহার করেই কংগ্রেস-সহ দেশটির বিভিন্ন বিরোধী নেতাকর্মীদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে ২০২০ সালে।

ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপ প্রায় এক দশক ধরে আড়ি পাতার স্পাইওয়্যার বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা এবং আইন প্রণয়নকারী সংস্থার কাছে বিক্রি করে আসছে বলেও নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। ওই স্পাইওয়্যারের সাহায্যে অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোনে কথোপকথনের ওপর নজরদারি চালানো সম্ভব।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে বলছে, নরেন্দ্র মোদির সেই সফরের কয়েক মাস পর ভারতে এসেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এর কিছু দিন পর জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদের ভোটে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিল মোদির সরকার। নয়াদিল্লির কয়েক দশকের পুরোনো পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদে ফিলিস্তিনকে ‘পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল ভারত।

পেগাসাস-কাণ্ডে ভারতের বিরোধী দলগুলোর মূল প্রশ্ন ছিল, নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার কি ইসরায়েল থেকে ফোনে আড়ি পাতার পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনেছে? গত বছর দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার পেগাসাস নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিলেও এ প্রশ্নের জবাব দেয়নি। 

দেশটির সুপ্রিম কোর্টেও এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে ‘জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত’ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তার মন্তব্য ছিল, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদীদের জানতে দিতে পারি না, কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জনসমক্ষে কোনও বিবৃতি দেওয়া যাবে না।’

যদিও প্রধান বিচারপতি এনভি রমণার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গত সেপ্টেম্বরে সরাসরি কেন্দ্রের যুক্তি খারিজ করে দিয়েছিল। দেশটির প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘আমাদের নাগরিকরা বলছেন, তাদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি খাড়া করা যাবে না। নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষিত থাকা উচিত।’

ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার কেনা এবং তার সাহায্যে বিরোধী নেতাদের ওপর নজরদারির অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য দেশটির সাবেক বিচারপতি আরভি রবীন্দ্রনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠিত হয়। ভারতের শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে সেই তদন্ত এখনও চলছে।

এসএস