নিজের একটি বাড়ি তৈরির স্বপ্ন সবারই থাকে। কিন্তু সেই বাড়ি তৈরির জন্য পূরণ করতে হয় অনেক শর্ত। অনেক সময় সারা জীবনের পুঁজি বিনিয়োগ করে বাড়ি নির্মাণ করতে হয়। এখন অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও বাড়ি বানিয়ে থাকেন। তবে শুধু টাকাই নয়, বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রয়োজন ভালো ও চাহিদা মতো জমিও।

ভালো জমি পাওয়া না গেলে অনেকেই বাড়ি তৈরির কাজে হাত দিতে চান না। মনের মতো করে একটি বাড়ি সবারই স্বপ্ন। জমি ভালো না হলে বা ছোট হলে সেই স্বপ্ন পূরণ কিভাবে সম্ভব? তবে এখন যেন কোনো কিছুই ‘অসম্ভব’ নয়। এই যেমন, মাত্র ৬ ফুটের জমিতে পাঁচতলা বাড়ির কথা কেউ চিন্তাই করতে পারবেন না।

তবে অনেকের চিন্তার বাইরে গিয়ে তেমনই একটি বাড়ি তৈরি করেছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের এক দম্পতি। বিহারের মুজাফফরপুরে সেই অনন্য ও অদ্ভুত বাড়িটি রয়েছে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা বা সৃজনশীলতা, মুজাফফরপুরের গনিপুরে রাস্তার পাশেই তৈরি পাঁচতলা এই বাড়িটি এখন মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ জানিয়েছে, মাত্র ৬ ফুট জমিতে নির্মিত এই অপূর্ব বাড়িটি দেখে মানুষ অবাক হচ্ছেন। পাঁচতলা এই বাড়ির সামনের অর্ধেক অংশে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে। অন্য অংশে তৈরি করা হয়েছে ঘর। বাড়ির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ ফুট এবং প্রস্থ ৫ ফুট। প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে একটি এক রুমের ফ্ল্যাট। যেখানে একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে।

রান্নাঘর ও টয়লেটের আকার যথাক্রমে আড়াই ও সাড়ে তিন ফিট। ঘরটির দৈর্ঘ্য ১১ ফুট এবং প্রস্থ ৫ ফুট। সব মিলিয়ে চারটি ফ্ল্যাট প্রস্তুত করা হয়েছে। নিচের তলায় কোনো ফ্ল্যাট নেই, ওপরে যাওয়ার জন্য সেখানে সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে।

তবে কেন এতো ছোট জমিতে বাড়ি নির্মাণ? সংবাদমাধ্যম বলছে, বিয়ের পর ৬ ফুট চওড়া ও ৪৫ ফুট লম্বা এই প্লটটি কিনেছিলেন বিহারের দম্পতি সন্তোষ ও অর্চনা। কিন্তু জমির প্রস্থ মাত্র ৬ ফুট হওয়ায় বহু বছর ধরে সেখানে কোনো নির্মাণকাজ করেননি তারা।

স্থানীয় লোকজন তাদের ওই জমি বিক্রি করার পরামর্শও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা দু’জনেই বিয়ের স্মৃতির এই প্লটে বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজেরাই বাড়ির ম্যাপ নিয়ে করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে নকশা পাস করিয়ে নেন।

২০১২ সালে নকশা পাস হওয়ার পর ২০১৫ সালে এই বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। যখন বাড়িটি তৈরি হয়েছিল, লোকজন এটিকে মুজাফফরপুরের আইফেল টাওয়ার বলে কটাক্ষ করতে শুরু করে।

এছাড়া প্রধান রাস্তা থেকে বাড়িটি স্পষ্ট দেখা যায়। কারণ, বাড়ির পাশে বড় আর কোনো বাড়ি নেই। এই অদ্ভুত বাড়ি দেখতে মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন মুজাফফরপুরের গনিপুরে যাচ্ছে।

এদিকে চারপাশে পানি জমে সরু জায়গায় নির্মিত এই পাঁচতলা বাড়িটি যাতে ভেঙে না পড়ে, সেই জন্য সম্প্রতি পাশের ফাঁকা জায়গায় সামান্য নির্মাণকাজ করা হয়েছে।

এই বাড়িটি এখন মুজাফফরপুরের মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সন্তোষ ও অর্চনা দম্পতির বিয়ের স্মৃতি হিসেবে নির্মিত এই বাড়িটি এখন সবার কাছে দেখার মতো জিনিস।

টিএম