স্মার্ট পেশা হিসাবে বর্তমানে অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজিতে (আইটি) চাকরির সুযোগ খুঁজেন। এখন আইটি সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র বহুমুখী, যেমন—হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ডাটা বেইস ম্যানেজমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, অ্যানিমেশন, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি।

আইটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নন-আইটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানেও থাকছে ‘আইটি বিভাগ’। ফলে এ খাতে চাকরির সুযোগ অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আইটি পেশায় আসতে চাইলে কীভাবে তৈরি হবেন, নিয়োগের বেলায় কি কি দেখা হয়, বেতন ও সুযোগ সুবিধা কেমন- এ নিয়েই থাকছে বিস্তর আলোচনা-

আইটি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সকল ধরনের আপডেট নিয়মিত জানতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বাস্তব ও ব্যবহারিক কাজে দক্ষ হতে হবে।

একাডেমিক ডিগ্রির চেয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কদর বেশি

শিক্ষাগত যোগ্যতাই শেষ নয়!

তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে প্রার্থীর একাডেমিক ডিগ্রির চেয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার কদর বেশি। তাই শুধুমাত্র কম্পিউটার সায়েন্স , আইটির বিষয়ে ডিপ্লোমা কিংবা স্নাতক ডিগ্রি দিয়ে চাকরি যুদ্ধে নামা যাবে না।  এ সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর ভেন্ডর সার্টিফিকেশন থাকলে চাকরির বাজারে গ্রহণযোগ্য বাড়বে। প্রার্থীর নিজের কোনো প্রজেক্ট বা গিগহাব রেপো থাকলে চাকরি পাওয়াটা আরও সহজ হবে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরিপ পরিচালনা করা, বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের মানসিকতা, সফটওয়্যার তৈরির ধারণা, সিস্টেম অ্যানালিস্ট করার যোগ্যতা থাকা জরুরি। ডাটা বেইসের খুঁটিনাটি, এসকিউএল ও তথ্য জমা করার পদ্ধতিও জানতে হবে। সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ার পদে কাজ করতে হলে ব্যাক-এন্ড, ফ্রন্ট-এন্ড, ডেভঅপ্স, সিস্টেম অ্যাডমিন ও কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্সের ওপর ধারণা থাকতে হবে; প্রগ্রামিং স্কিল বাড়াতে হবে।

তবে আইটি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সকল ধরনের আপডেট নিয়মিত জানতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বাস্তব ও ব্যবহারিক কাজে দক্ষ হতে হবে।

কি কি পদে নিয়োগ হয়

তথ্যপ্রযুক্তিতে ডিপ্লোমা কিংবা স্নাতক শেষ করার পর হেল্প ডেস্ক টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরির সুযোগ থাকে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবেও প্রাথমিকভাবে জনবল নিয়োগ দেয়। তবে প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হয় ‘সিস্টেম অ্যানালিস’ পদে। 

করপোরেট অফিসে আইটি সিকিউরিটি বা সাইবার সিকিউরিটি হিসেবেও কাজের সুযোগ আছে। এ ছাড়া নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, ডাটা বেইস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, আইটি কনসালট্যান্ট, প্রজেক্ট ম্যানেজার, ক্লাউড আর্কিটেক্ট, কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কাজ কি

তথ্য-প্রযুক্তি খাতে পদ অনুযায়ী একজন কর্মীকে বিভিন্ন কাজ করতে হয়। হেল্প ‘ডেস্ক টেকনিশিয়ান’ পদে সাধারণত হার্ডওয়্যার, প্রিন্টার ও ইন্টারনেটের ছোটখাটো সমস্যা সমাধান করতে হয়। ‘সিস্টেম অ্যানালিস্ট’ পদে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা, উন্নয়ন ও কম্পানির ইনফরমেশন সিস্টেমের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। 

এ ছাড়া সফটওয়্যার আপডেট ও প্রয়োজনীয় ম্যানুয়াল লেখা একজন সিস্টেম অ্যানালিস্টের অন্যতম কাজ। প্রতিষ্ঠানের সার্ভার ও ওয়েবসাইটকে সাইবার হামলা কিংবা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব থাকে ‘আইটি সিকিউরিটি’র। 

একজন ‘নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’কে নেটওয়ার্ক সেটআপ থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ, নেটওয়ার্ক উন্নত করাসহ বিভিন্ন কাজ করতে হয়। ‘ডাটা বেইস অ্যাডমিনিস্ট্রেট’র পদে কাজ করতে চাইলে একটি কোম্পানির সব ধরনের তথ্যকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন ও ব্যবহার করার দায়িত্ব নিতে হবে।

‘আইটি কনসালট্যান্ট’রা  সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির আওতাধীন না হয়ে সব ধরনের ক্লায়েন্টের ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে।  আর নতুন পণ্য বা সফটওয়্যারের সমস্যা ও ত্রুটি দূর করে ক্লায়েন্টের জন্য মানসম্মত পণ্য নিশ্চিত করতে হয় একজন কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স কর্মকর্তাকে। 

অপরদিকে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় মেশিন লার্নিং প্রসেস বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর এটি নিয়ে কাজ করতে হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কর্মকর্তাকে।

নিয়োগের বিষয়টি সাধারণত প্রতিষ্ঠান ভেদে আলাদা হয়

নিয়োগ প্রক্রিয়া কেমন হয়

নিয়োগের বিষয়টি সাধারণত প্রতিষ্ঠান ভেদে আলাদা হয়। ব্যাংক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তবে আইটি ফার্ম ও কর্পোরেট হাউজ বা আইটি ফার্মগুলো মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে থাকে। 

বেতন ও সুযোগ সুবিধা

বেতন ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী প্রদান করা হয়। তাই নির্দিষ্ট করে মাসিক বেতন বলার সুযোগ নেই। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইটি বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এন্ট্রি লেভেলে মাসিক বেতন ২০-৩০ হাজার টাকার মতো হতে পারে। 

তবে এক-দুই বছরের অভিজ্ঞদের জন্য মাসিক ৫৫ থেকে ৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তিন-পাঁচ বছরের অভিজ্ঞদের মাসিক বেতন এক লাখ টাকার ওপরে হতে পারে। ৮-১০ বছরের অভিজ্ঞদের প্রতিষ্ঠানভেদে মাসিক বেতন দুই লাখ টাকা হতে পারে। 

আরআর