গ্রাজুয়েশন শেষে সবার মধ্যেই একটি সংকট দেখা দেয়, পরিচয় সংকট। তখন নিজেকে ছাত্র বলেও পরিচয় দেওয়া যায় না, আবার চাকরিজীবীও বলা যায় না। অবস্থা যখন এই, তখন অধিকাংশ গ্রাজুয়েট ভুল সিদ্ধান্ত বেছে নেন। ফলে বেশিরভাগ গ্রাজুয়েটকেই দেখা যায় যে বিষয় তিনি পড়াশোনা করেছেন, তার বাইরে গিয়ে চাকরি করছেন কিংবা করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু চিত্রটা উল্টোও হতে পারতো!

ছোট করে দুইটি উদাহরণ দেওয়া যাক-

১. সদ্য এমবিএ শেষ করেছেন শাকিল আহমেদ। ছুটছেন চাকরির সন্ধানে। দ্রুত একটি চাকরি দরকার। সরকারি-বেসরকারিসহ আবেদন করছেন একাধিক প্রতিষ্ঠানে। মন মতো চাকরি খুঁজে পাওয়া কিছুটা দুষ্কর বটেই! 

২. বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে সদ্য ইন্টার্নশিপ শেষ করেছেন সাবরিনা। পড়েছেন প্রতিষ্ঠিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কপালেও চিন্তার ভাঁজ। ইন্টার্নশিপ শেষ হলেও মিলছে না চাকরির দেখা। অনেকটা হতাশ হয়েই চাকরি খোঁজা বাদ দিয়েছেন সানিদ সালেহীন। ভাবছেন ব্যবসা করবেন। কিন্তু পুঁজি?

 

গ্রাজুয়েশন শেষে এভাবে ঘুরঘুর করছেন অনেকেই। তবে চাকরি খোঁজারও আছে কায়দাকানুন! সেসব বাতলে দিয়েছেন স্বনামধন্য একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক জুলফিকার হাসান। তিনি বলেন, ‘তাড়াহুড়ার কিছু নেই। ধীরে সুস্থে চাকরি খুঁজতে হবে। তৈরি করতে হবে নেটওয়ার্কিং। নিত্য নতুন মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে সহজ হবে পছন্দসই চাকরি পেতে। রিয়েল লাইফেই নয়, নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলতে হবে সামাজিক যোগাযোগ সাইটেও। লিংকডইনের মতো প্রফেশনাল সামাজিক সাইটে একটি একাউন্ট এখন সময়ের দাবি।’

খোঁজখবর রাখতে হবে অনলাইন ভিত্তিক জব সাইটে ও দৈনিক পত্রিকার ক্যারিয়ার বিষয়ক পাতায়। নিজেকে আপডেট রাখতে হবে হালনাগাদ সব তথ্য আয়ত্তে রেখে। ব্যবহার করতে হবে নিজের দক্ষতাকে। প্রত্যেকটি মানুষই কোন না কোন বিষয়ে দক্ষ। নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে লুফে নেওয়া যাবে মনমতো একটি চাকরি।

অনেকেই চমৎকার আঁকতে ভালোবাসে। তার প্রতিভা ঘরের দেয়ালেই সীমাবদ্ধ থাকবে? না। বিভিন্ন ম্যাগাজিন, দৈনিক পত্রিকাসহ অনেক জায়গায়ই রয়েছে কাজের সুযোগ। দক্ষতা থাকলে বাগিয়ে নেওয়া যাবে পছন্দসই এসব চাকরি। চাকরি খোঁজার আগে খুঁজতে হবে নিজে কোন কাজের উপযোগী। তবে নির্ভুল ও তথ্যসমৃদ্ধ একটি জীবনবৃত্তান্ত বাজিমাত করে দিতে পারে ক্যারিয়ারে। জীবনবৃত্তান্ত দেখেই চাকরি দাতা চাকরি প্রত্যাশিদের সম্পর্কে ধারনা নিবেন।


 

অন্যদিকে এমবিএ শেষে চাকরিতে বুদ হয়েই থাকতে হবে, এমনটি মানতে নারাজ আসাদুল ইসলাম। দীর্ঘদিন ধরেই ক্যারিয়ার নিয়ে লিখছেন। বললেন, চাকরির পিছনে না ছুটে ঘরে বসেই আয়-রোজগার সম্ভব। বিভিন্ন বিষয় পরামর্শ প্রদান, ইভেন্ট ফটোগ্রাফি, ওয়েব ডিজাইনিং, সাইট রিভিউ ও প্রডাক্ট রিভিউ করে আয় করা সম্ভব। রয়েছে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজের সুযোগ। ফাইবার ডটকম, আপ-ওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকমে ডাটা এন্ট্রিসহ বিভিন্ন কাজ সুযোগ মিলে।এখানে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব ঘরে বসেই।

শুধু কি তাই? বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকসহ অনলাইনে একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে ফিচার লিখার বিনিময়ে সম্মানজনক পারিশ্রমিক প্রদান করে। ইউটিউব তো আছেই। সৃজনশীল ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। যদি চাকরির পিছনে ঘুরঘুর না করেই আয়-রোজগার করা যায়, তবে আর দেরি কেন?