প্রতীকী ছবি

চাকরির ক্ষেত্র বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাকরি-প্রত্যাশীর সংখ্যাও। অবশ্য ইঁদুর দৌড় খেলায় চাকরির ক্ষেত্রের চেয়ে চাকরি-প্রত্যাশীর সংখ্যাই বেশি। প্রতিযোগিতাও বেশি। একসময় প্রতিযোগিতা হতো যোগ্য-অযোগ্যদের। সেই যুদ্ধে যোগ্যরাই টিকে থাকতো। সময়ের পালাবদলে পরিবর্তন হয়েছে অনেক হিসাব নিকাশ। এখন চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা হয় সমপর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন প্রার্থীদের মধ্যে। কার্যতই ‘সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট’-এর দিন শেষ। এখন ‌‘সারভাইভাল অব দ্য মোর ফিটেস্ট’-এর বাংলাদেশ।

এবার আসি মূল কথায়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে এনজিও ও আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থার কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের সব বড় বড় এনজিও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের জন্য দরকার যোগ্য কর্মী। প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলেও চাকরি হয় হাতে গোনা কিছু সংখ্যক মানুষে। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে কয়েটি কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রথমত, সঠিক পদ্ধতিতে আবেদনপত্র ও আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করা। দ্বিতীয়ত, সাক্ষাৎকারে গিয়ে গতানুগতিক উত্তর দেওয়া এবং সবশেষ এনজিও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না থাকা।

অথচ এসব প্রতিষ্ঠান হতে পারে দেশি চাকরি-প্রত্যাশীদের কাছে ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ এর মতো। নেপথ্য কারণ, দেশে বসেই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন, আন্তর্জাতিক মানের বেতন কাঠামো ও সুবিধা ভোগের দারুণ সুযোগ।চাকরি-প্রত্যাশীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা পড়তে হয় এনজিওর ইন্টারভিউ বোর্ডে। তবে অনেকেই জানেন না, এসব ইন্টারভিউগুলোতে সাধারণত কয়েকটি প্রশ্নই বেশি করা হয়। তাহলে চলুন জেনে নেই সেসব প্রশ্ন ও তার উত্তর-

আপনার সম্পর্কে বলুন-
এনজিওর ইন্টারভিউতে ‘আপনার সম্পর্কে বলুন’ খুবই প্রচলিত একটি প্রশ্ন। অনেকেই আছেন নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে, কোন বিষয়ে দিয়ে শুরু করবেন ভেবে পান না। নিজের কর্মজীবন বলবেন নাকি একাডেমিক বিষয়ে আলোচনা করবেন, গুলিয়ে ফেলেন। স্বাভাবিকভাবে এই ধাক্কা সামাল দিতে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটও লেগে যেতে পারে। আর এই কালক্ষেপণই আপনার জন্য ‘কাল’ হয়ে উঠতে পারে। কথায় আছে, ফার্স্ট ইম্প্রেশন ইস দ্য বেস্ট ইম্প্রেশন। প্রথমেই যদি ভ্যাবা-চ্যাকা খেয়ে বসেন, তবে চাকরি তো হবেই না উল্টো আপনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

কার্যত এই প্রশ্নটিকে যারা এতদিন ডালভাত মনে করে আসছেন, তারা এখন থেকেই সতর্ক হোক। আজকের বাজারে নিজের সম্পর্কেও পড়াশোনার দরকার আছে। যে নিজের সম্পর্কেই জানেন না, তাকে দিয়ে আদতে কিচ্ছুই হবে না- এমন একটি মিথ করপোরেট দুনিয়া খুব বেশি প্রচলিত। এখান থেকে বের হয়ে আসতেই হবে। 

খুব ভালো হয় যদি এমন প্রশ্নের উত্তর তিনটি ভাগে দেওয়া যায়। বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ। শুরু করতে পারেন আপনার বর্তমান অবস্থান, অর্থাৎ বর্তমানে যেসব দায়িত্ব পালন করছেন, যেখানে আপনি যেসব কাজে নেতৃত্বে দিচ্ছেন। খুব ভালো হয়, আপনি যে পদে আবেদন করেছেন, সে পদ সংক্রান্ত কিছু কাজের সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করা। এরপর আপনার অতীত নিয়েও কথা বলতে পারেন। তবে শেষ করতে হবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলে। 

এনজিওতে কেন কাজ করতে চান?
এখন পর্যন্ত যারাই এনজিও প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, সবাইকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এসব প্রশ্নের গতানুগতিক উত্তর দিলেই ধরা খাবেন। সাধারণত চাকরি-প্রত্যাশীরা এনজিও সম্পর্কে কতটা রিসার্স করেছেন, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতেই এমন প্রশ্ন করা হয়। কার্যতই আপনার উত্তর হওয়া চাই প্রফেশনাল দৃষ্টিভঙ্গিতে। এনজিওতে কাজ করতে আপনি কতটা উদগ্রীব হয়ে আছেন, সেটা তাদের কাছে মুখ্য নয়। আপনি কতটা যোগ্য সেটাই মুখ্য।

এনজিও প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন কেচ্ছা না শুনিয়ে তাদের বাস্তবায়নাধীন প্রোগ্রামগুলো নিয়ে কথা বলা। তাদের প্রোগ্রামগুলো যেভাবে ফলপ্রসূ হচ্ছে ও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে সেসব দিক তুলো ধরা। একই সঙ্গে বাস্তবায়নাধীন প্রোগ্রামগুলো আপনার ইন্টারেস্টর সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তাও তুলে ধরতে হবে। টু দি পয়েন্টে কথা বলতে পারলে অনেকের থেকেই এগিয়ে থাকবেন।

এনজিওর কাজ আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
তুলনামূলক কিছুটা কঠিন প্রশ্ন। এসব ক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলী উত্তর দিতে পারলে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। খুব বেশি এদিক সেদিক না বলে, সরাসরি এনজিওগুলোর মূল নীতি, সোশ্যাল ওয়ার্ক, হিউম্যান রাইটস সংশ্লিষ্ট কাজে এনজিওর ভূমিকা নিয়ে কথা বলতে হবে। এসব কাজের মধ্যদিয়ে এনজিও সংস্থাগুলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সেবা ও সহযোগিতা করছে- সেসব বলা যেতে পারে। দু’একটা উদাহরণও দেওয়া যেতে পারে। যেমন বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরে নিয়ে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। সামগ্রিক ভাবে এনজিওর কর্মতৎপরতা সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে- এসব তুলে ধরতে হবে। 

এনজিওতে পূর্বে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে কী না?
সাধারণত মিড লেভেল জব সিকারদের এসব প্রশ্ন করা হয়। এরপরেও ফ্রেশার নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তুলে ধরতে পারেন। আর অভিজ্ঞদের প্রশ্ন করলে, যেসব প্রজেক্ট কাজ করেছেন, সেসব বলতে হবে। 
 
বহু-সংস্কৃতিমনা দলের সঙ্গে কাজে আগ্রহী কী না ?
সাধারণত এনজিওতে বহু সংস্কৃতির লোক থাকে। এক কথায় মাল্টি-কালচারাল টিম নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক এনজিও সংস্থা। তারা বিশ্বাস করে মানুষে মানুষে কোনও ভেদাভেদ নেই। সবাই এক। একই প্লাটফর্মের অধীন। ফলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। এই ধরনের বিশ্বাস আপনার মধ্যেও আছে, সেসব তুলে ধরতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যেকোনো সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গেই আপনি কাজ করতে যোগ্য ও আগ্রহী। ইতিপূর্বে এমন কোনও দলের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরতে পারেন।

ইন্টারভিউ বোর্ডে আরও প্রশ্ন হতে পারে। এখানে শুধুমাত্র সবচেয়ে বেশি প্রচলিত প্রশ্ন সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়া হলো। তবে চাকরি-প্রার্থীদের সব ধরনের প্রশ্নের উত্তরে কী বলবেন, সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তবেই চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।