প্রতীকী ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ভালো একটি চাকরি পেতে কে না চায়? তবে কেউ পায়, কেউ পায় না। নেপথ্য কারণ হিসেবে অনেক তথ্যই দাঁড় করানো যায়। অনেকগুলো কারণের মধ্যে চোখে পড়ার মতো একটি ‘কম সিজিপিএ’। চাকরির বাজারে কম সিজিপিএ নিয়ে প্রতিযোগিতায় আসা, অনেকটা অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধে যাওয়ার মতো। 

শূন্য পদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি প্রার্থীর এই বাজারে আপনাকে টিকে থাকতে হলে প্রাথমিক যোগ্যতা ‘ভালো সিজিপিএ’। সম্মানজনক পদে কিংবা বড় প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনের চাকরির ক্ষেত্রে সিজিপিএ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন> সিভিতে যে ৮ স্কিল উল্লেখ করলে চাকরি হবেই

বিশেষ করে নবম গ্রেডের সরকারি চাকরি, সরকারি ব্যাংকের অফিসার পর্যায়ের চাকরি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি পদে আবেদনের জন্য ভালো সিজিপিএ-এর কথা উল্লেখ থাকে। শুধু তাই নয়, বলা থাকে একাডেমিক পর্যায়ে কোনো তৃতীয় বিভাগ থাকা যাবে না। সিজিপিএ হিসেবে সেটা ২.৫০ পয়েন্ট এর নিচে ধরা হয়।

স্বভাবতই যারা কম সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করেছেন তাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে- এখন কী হবে? চলুন তাহলে কয়েকটি কৌশলগত দিক নিয়ে আলোচনা করা যাক, যাতে আপনি কম সিজিপিএ থাকার পরেও ভালো একটি চাকরি পেতে পারেন।

আরও পড়ুন> এই বিষয়টি না জানলে কর্মক্ষেত্রে টিকতেই পারবেন না

প্রথমত. সিজিপিএ যদি একদমই কম থাকে, তবে কারিগরি দক্ষতার দিকে মনোযোগী হতে পারেন। তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কাজে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারেন। ধরেন আপনি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করেছেন। সিজিপিএ ২ পয়েন্টের কিছুটা বেশি। এই পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বা আপনার বিষয় সংশ্লিষ্ট তেমন কোনো ভালো চাকরি নাও পেতে পারেন। পেলেও হয়তো বেতন কাঠামো আপনার পছন্দ হবে না।

আরও পড়ুন> নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বেতনের কথা উল্লেখ থাকে না কেন? 

আপনি নিজেকে কয়েকটি বিষয়ে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলতে পারেন। যেমন ওয়েব ডিজাইনিং শিখতে পারেন। ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারেন। কিংবা এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার বিষয়ক বিভিন্ন কোর্স করে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার সিজিপিএ কম না বেশি, তার থেকেও গুরুত্ব পাবে আপনি এসব কাজ কতটা ভালো জানেন। তখন ভালো বেতনে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত. নিজের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে অন্যদের থেকে অনেক বেশি। প্রথমে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। কে কোথায় চাকরি করছে, সে খবর নিতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে। পরিচিত যেসব মানুষ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। নিজের দক্ষতা, আগ্রহ ও ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা তাদের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। যাতে তারা ভালো প্রতিষ্ঠানে জব প্লেসমেন্ট করতে পারে।

অনেকেই স্বীকার করবেন, ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে অ্যালামনাইয়ের ভূমিকা। বিশেষ করে যারা একদম ফ্রেশার তাদের জন্য অ্যালামনাই সত্যিকার অর্থেই অনেক কাজের।

আরও পড়ুন> এনজিও চাকরি : ইন্টারভিউ বোর্ডে কী প্রশ্ন হয়, যেভাবে উত্তর দেবেন

তৃতীয়. বিভিন্ন জব ফেয়ারে অংশগ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে বিডি জবস নিয়মিত বিভাগীয় পর্যায়ে চাকরির মেলা আয়োজন করে। এখানে  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুনদের জন্য চাকরির সুযোগ নিয়ে হাজির হয়। এসব ক্ষেত্রে কম সিজিপিএ থাকার পরেও ভালো প্রতিষ্ঠানে চাকরি হতে পারে। মোদ্দা কথা চাকরি পাওয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে যায়।

আকিজ গ্রুপ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে- যারা সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের নেওয়া সরাসরি সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় আগে থেকে সিভি গ্রহণ করা হয় না। যারা নির্ধারিত দিনে উপস্থিত হবেন, তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে ভালো লাগলে চাকরি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কম সিজিপিএ থাকার পরেও ভালো বেতনে অহরহ চাকরি হচ্ছে। ফলে এটিও হতে পারে দারুণ একটি সুযোগ।

সর্বশেষ বলতে চাই যারা কম সিজিপিএ নিয়ে হতাশায় রয়েছেন, তারা সময় নষ্ট না করে উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন। এতে দ্রুত ইতিবাচক সাড়া পাবেন। মনে রাখবেন, চাকরি বাজারে কেবলমাত্র যোগ্যরাই টিকে থাকবে, অযোগ্যরা হারিয়ে যাবে।