একে তো লকডাউন, অন্যদিকে ঈদের ছুটি। সঙ্গত কারণেই পিছিয়ে গেছে একাধিক সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা। ফলে অনেকের প্রস্তুতিই চলছে ঢিমেতালে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এ সময়ে কিছুটা কৌশলী ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রস্তুতি আপনাকে এগিয়ে রাখতে পারে চাকরি যুদ্ধে। তাহলে চলুন জেনে নিই বন্ধের সময়টা কিভাবে কাজে লাগাবেন-

লড়াইটা হবে কোন পথে?

প্রস্তুতি শুরুর আগে নিশ্চিত হোন, কোন ধরনের চাকরি করতে চাইছেন। সোজা বাংলায়, আপনি কোন পথের পথিক। সরকারি নাকি বেসরকারি? সরকারি হলে বিসিএস, ব্যাংক, জুডিশিয়ারি নাকি অন্যকোন বিভাগে আবেদন করবেন। লক্ষ নির্ধারণ হয়ে গেলে বসে থেকে কাজ নেই। এবার নেমে পড়ুন সিলেবাস হাতে নিয়ে। সিলেবাস দেখে চটজলদি তৈরি করে ফেলুন নিত্যদিনের রুটিন। সেখানে থাকবে কখন কি পড়বেন সেই তালিকা। সঙ্গে সময়টাও বেঁধে দিন।  

এবার আসি দ্বিতীয় কথায়। বিষয়ভিত্তিক সিলেবাসগুলো সমন্বয় করে নিজস্ব একটি গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। সঙ্গে বিগত বছরের প্রশ্ন পর্যালোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো সিরিয়ালি সাজাতে হবে। এবার টপিকের গুরুত্ব অনুসারে আগে শেষ করতে হবে।

কী পড়বেন, কী পড়বেন না

বেশিরভাগ চাকরি প্রার্থীর আক্ষেপ থাকে সাধারণ জ্ঞান নিয়ে। সমসাময়িক বিষয়, দেশি ও আন্তর্জাতিক ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকায় অনেকেই সাধারণ জ্ঞানে ভালো করতে পারেন না। অথচ প্রায় প্রত্যেকটি সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় এ বিষয় কমপক্ষে ২০ নম্বরের প্রশ্ন আসে। বিশেষ করে বিসিএস, জুডিশিয়ারি ও ব্যাংকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞানের বিকল্প নেই। বুদ্ধিমানের কাজ হবে, এই বন্ধে সাধারণ জ্ঞানকে ঝালিয়ে নেওয়া। হাতে যেহেতু সময় আছে, তাই খুঁটিনাটি বিষয়েও নজর দিতে হবে। তবে কারও সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি ভালো থাকলে, সে অন্যান্য সাধারণ বিষয়গুলো পড়তে পারেন।

যে কৌশলে বাড়াবেন সাধারণ জ্ঞান

* বিভিন্ন পত্রিকার অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক ও মতামত পাতা নিয়মিত পড়ুন। অন্তত একবার হলেও পুরো পত্রিকায় চোখ বুলান। বিশেষ করে শিরোনামগুলো পড়ুন। এতে সমসাময়িক বিষয়ে আপনি আপডেট হয়ে যাবেন। এছাড়াও টিভিতে খবর দেখুন। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখুন।

* সুযোগ পেলে স্বীকৃত জ্ঞানী বা বিখ্যাত লোকদের বক্তব্য শুনুন। বিতর্ক দেখুন। জাতীয় সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে নজর রাখুন। মনে রাখবেন, তাঁরা যা বলছেন, দেশের মধ্যে সেসবই ঘটছে!

* একই পড়া একই বই থেকে বারবার না পড়ে আলাদা আলাদা বই পড়ুন। বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও মৌলিক সাধারণ জ্ঞানের জোরালো প্রস্তুতি নিন।

* দৈনিক কার্যক্রমের যোগ, বিয়োগ, ভাগ, পূরণ ক্যালকুলেটর ছাড়া করুন। যেখানে-সেখানে কলম চালানোর অভ্যাস করুন। যত ধরনের অঙ্ক আছে, তার মূল কিন্তু যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ। শুধু শিখতে হয় কখন কোনটা করতে হবে!

* যেটা যতটুকু পড়বেন, বুঝে পড়বেন, যেন চাইলেই সেসব টপিক নিয়ে জড়তা ছাড়া কমপক্ষে দুই মিনিট অনর্গল সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে পারেন।

এছাড়াও পড়তে হবে ভালো মানের সাধারণ জ্ঞানের বই ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মাসিক সাময়িকী। জানতে হবে দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি), রপ্তানি ধারা, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স, রিজার্ভ, কৃষি পরিস্থিতি, দারিদ্র্য হ্রাস, শ্রমবাজার, বিনিয়োগ পরিস্থিতি প্রভৃতি অগ্রগতির তথ্য।

প্রস্তুতি থাকতে হবে ইংরেজিতেও

সাধারণ জ্ঞান ছাড়াও ইংরেজি গ্রামার অংশে থাকা চাই যুতসই প্রস্তুতি। এ ক্ষেত্রে অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। যদিও ইংরেজি অংশে নবম ও দশম শ্রেণির গ্রামার বই অনুসরণ করলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা। বিশেষ করে  Tense, Parts of speech, Verb, Translation, Number, Gender, Narration, Voice Change, Correct Form of Verbs, Pronunciation, Synonym, Antonym, Transformation of Sentence, Appropriate Word, Idioms and Phrases থেকে প্রশ্ন আসে। এগুলোর সঙ্গে অনেক vocabulary শিখতে হবে।

জয় করতে হবে গণিত ভীতি

গণিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্য বই অনুসরণ করতে হবে। সুদকষা, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, সমানুপাত, শতকরা, লসাগু-গ সাগু, লাভ-ক্ষতি, ভগ্নাংশ, লগারিদম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে। দেখতে হবে বীজগণিতের সূত্র, অনুসিদ্ধান্ত, জ্যামিতি ও পরিমিতির সাধারণ নিয়মাবলীগুলো।

অতঃপর এ বন্ধেও প্রস্তুতি চলুক জমপেশ। যাতে নিয়োগ পরীক্ষায় অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারেন।