পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিসিএসে কম ক্যাডার পায় কেন? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা একেকজন একেক ভাবে দেবে। এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেয়ার করবো আজ।

আমি মনে করে করি এর পিছনে প্রধানত ৩টি কারণ রয়েছে।

১. অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চেষ্টা করার পর কোথাও চান্স না পেয়ে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) ন্যাশনালে বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এরপর তারা ভাবতে শুরু করে আমাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না, যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হলও না! আর এখানেই তারা ফিফটি পারসেন্ট হেরে যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াই জীবনের সব সফলতা নয়। জীবনের বড় বিষয় হলও আপনি পড়াশোনার মাধ্যমে যে ক্যারিয়ার গড়তে চান, শেষ পর্যন্ত সেটা করতে পারলেন নাকি পারলেন না। 

২. যথাযথ গাইডলাইনের অভাব। প্রত্যেক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শত শত স্টুডেন্ট বিসিএস ক্যাডার হয়। ফলে যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারা সহজেই বিসিএস ক্যাডারদের সান্নিধ্য পায় এবং তারা কাছ থেকে টিপস ও গাইডলাইন নিয়ে বিসিএসসহ অন্যান্য চাকরির প্রস্তুতিতে এগিয়ে যায়। অনার্স-মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই যেখানে তারা বিসিএস ও জব রিলেটিভ ম্যাক্সিমাম বই পড়ে শেষ করে ফেলে, যেখানে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করার পড় অন্য ইউনিভার্সিটির অধিকাংশ স্টুডেন্ট জানতে চায় বিসিএস, ব্যাংক ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য কী কী বই পড়ব?

৩. ন্যাশনাল বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অধিকাংশ স্টুডেন্টের কাছে পড়াশোনাটা অপশনাল বিষয় আর অন্য সকল বিষয় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় পরীক্ষা আসলেই তারা পড়াশোনা করে। সারা বছর বইয়ের সাথে কোনও যোগাযোগ থাকে না। এমনও অনেক স্টুডেন্ট দেখেছি তারা অনার্স-মাস্টার্সের কোন দিন কোন পরীক্ষা দিচ্ছে পরীক্ষার হলে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত বলতে পারে না। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টুডেন্ট সকাল ৮টায় সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে ঢুকার জন্য সকাল ৬.৩০ থেকে লাইন ধরে। যা ন্যাশনাল বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় না।

মূল কথা হলও বিসিএসসহ যেকোনো চাকরির পরীক্ষার জন্য আত্মবিশ্বাসটা অনেক বড় বিষয়। সঙ্গে যথাযথ গাইডলাইনও। যেমন আরব জাতি যখন সুপথ হারিয়ে ফেলেছিল তখন মহান আল্লাহ তা'য়ালা হযরত মুহাম্মদ (স)কে প্রেরণ করেছিলেন তাদের গাইডলাইন প্রদানের জন্য। অতএব জীবনে সফলতার স্বাদ পেতে গাইডলাইন বড় একটি বিষয়।

আসলে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা সাবজেক্ট কাউকে ভালো জব পাইয়ে দেয় না, সেটা জন্য নিজেকেই চেষ্টা করতে হয়। সেই জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই সবাই বিসিএস ক্যাডার কিংবা ব্যাংকার হয় না, ন্যাশনাল ও প্রাইভেট  ইউনিভার্সিটি থেকেও অনেকের হয়। পার্থক্য হলও কম আর বেশি। আপনিই দেখুন না, যদি শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো সাবজেক্ট (তথা কথিত ভালো সাবজেক্ট!) এর স্টুডেন্টরাই শুধু বিসিএস ক্যাডার, ব্যাংকার ও ভালো জব পাচ্ছে, অন্যরা কিছুই পাচ্ছে না- এমন তো নয়।

এ জন্যই বলি, যে আত্মবিশ্বাসী ও পরিশ্রমী সে যেখানেই পড়ুক না কেন আর যে সাবজেক্টেই পড়ুক না কেন সে ভালো করবেই। পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে শুধু যারা পরিশ্রম, টেকনিক অবলম্বন করেছে তারাই চাকরি পেয়েছে, সবাই পায়নি। ঠিক তেমনই ন্যাশনাল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও যারা পরিশ্রম করেছে, টেকনিক অবলম্বন করেছে শুধু তারা বিসিএস ক্যাডার, ব্যাংকার ও ভালো জব পেয়েছে।

মূল কথা হলও- জীবন সফল হতে গেলে বড় স্বপ্ন থাকতে হবে। পাশাপাশি সেই স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছা থাকতে হবে। সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য দৃঢ়তার সাথে নিরলস পরিশ্রম করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সাবজেক্ট কোনটাই বড় বিষয় নয়।

বিসিএস হলও আত্মবিশ্বাস ও টেকনিকের খেলা। যার মধ্যে এই দুটি বিষয় থাকবে সে ৫০% এগিয়ে যাবে, আর বাকি ৫০% তাকে পড়াশোনা করে অর্জন করতে হবে। আর তাই আত্মবিশ্বাসীরা অল্প পড়েও টেকনিক অবলম্বন করে বিসিএসে বারবার টিকে যায় আর অনেকে আছে রাত-দিন পড়েও একবারও টিকে না আত্মবিশ্বাস ও টেকনিকের অভাবে।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, কে কোন ভার্সিটিতে পড়েছে, কোন বিষয়ে পড়েছে সেটা বড় কথা নয়, পড়াশোনা শেষ করে কে কী করতে পেরেছে সেটাই বড় কথা।

লেখক -
৩৫তম বিসিএস ক্যাডার, সাবেক সিনিয়র অফিসার (পূবালী ব্যাংক লিমিটেড)
প্রতিষ্ঠাতা : BCS Technique  (বিসিএস স্পেশাল প্রাইভেট প্রোগ্রাম)
লেখক: BCS Preliminary Analysis 
লেখক : প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ Analysis