সময়টা পাল্টেছে। এখন যেকোন একটি বিষয়ে একাডেমিক পড়াশোনা করলেই হয় না। একই সঙ্গে ধারণা থাকতে হয় বিষয়ভিত্তিক চাকরির বাজারের হালচাল সম্পর্কে। আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ও বর্তমান সময়ের পরিবর্তনশীল বাজারে সমাজবিজ্ঞানে অধ্যায়নরত বা স্নাতক ডিগ্রিধারীদের চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছেই। নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আটকে না থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও সমাজবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারীদের বিভিন্ন সেক্টরে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেখাদেখি  একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনেসকোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসাবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যয়ন শুরু হয়। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজে বিভাগটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও এই বিভাগের বিকাশ অব্যাহত রয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারীদের রয়েছে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাশাপাশি দাতব্য ও বেসরকারি সংস্থায় পেশাগতভাবে কাজ করার সুযোগ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক, দেশি ও স্থানীয় এনজিওগুলোর বিভিন্ন বিভাগে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

‘সমাজবিজ্ঞান’ বিষয়ের চাহিদা কেন বাড়ছে?

সমাজবিজ্ঞানের সূচনালগ্ন থেকেই সমাজবিজ্ঞানীরা মানুষ এবং সমাজের গতিশীলতার দিকে নজর দিয়েছেন। তাঁরা সমাজবিজ্ঞানের অধ্যায়নকে সমৃদ্ধ করতে যুগে যুগে বিভিন্ন পদ্ধতি বিকাশ করেছন। যা সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টির ক্ষেত্রও বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমানে সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটেছে। এ সকল শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি বা উদ্ভব হয়েছে কেবল সমাজ অধ্যয়ন ও গবেষণার প্রয়াসে।

অর্থনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (Economic Sociology)

এটি সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। সমাজতাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে এখানে অধ্যয়ন করা হয়। শিল্পসমাজে কর্ম, বেকারত্ব ও অবসর- এর উপর এটি আলোকপাত করে থাকে।

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান (Political Sociology)

ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সামাজিক পটভ‚মি প্রভৃতি নিয়ে এটি অধ্যয়ন করে।

গণমাধ্যমের সমাজবিজ্ঞান (Media Sociology)

গণমাধ্যমের সামাজিক ভিত্তি, প্রযুক্তির বিকাশ, বিষয়বস্তুর সামাজিক নির্মাণ, ফলাফলকে গণমাধ্যমের সমাজবিজ্ঞানে চর্চা করা হয়। মানুষ কিভাবে গণমাধ্যম ব্যবহার করে এটিও এর বিষয়বস্তু।

নগর সমাজবিজ্ঞান (Urban Sociology)

নগর সমাজবিজ্ঞান নগরের সামাজিক সম্পর্ক এবং কাঠামোকে অধ্যয়ন করে। নগরের উদ্ভব, নগরের কাঠামো এবং নগর জীবনের সমস্যা নিয়ে নগর সমাজবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও রোগের সমাজবিজ্ঞান (Sociology of Health and Illness)

সমাজবিজ্ঞানের এ শাখাটি স্বাস্থ্য ও রোগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক, অসুস্থতা বা রুগ্নতার কারণ ও বিস্তার এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা ব্যবস্থা ও এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে।

এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি শাখা-প্রশাখা রয়েছে যা নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে। যেমন-

১। সাহিত্যের সমাজবিজ্ঞান (Sociology of Literature)

২। ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞান (Historical Sociology)

৩। গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান (Rural Sociology)

৪। আইনের সমাজবিজ্ঞান (Sociology of Law)

৫। শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান (Sociology of Education)

৬। বিপর্যয়ের সমাজবিজ্ঞান (Sociology of Disaster)

৭। সংগঠনের সমাজবিজ্ঞান (Sociology of Organization)

চাকরি-বাকরির সুযোগ কেমন?

সমাজবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারীদের রয়েছে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পাশাপাশি দাতব্য ও বেসরকারি সংস্থায় পেশাগতভাবে কাজ করার সুযোগ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক, দেশি ও স্থানীয় এনজিওগুলোর বিভিন্ন বিভাগে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়াও গবেষণা, উন্নয়ন, প্রোগ্রাম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন। এছাড়া সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধীনে গবেষক, সহকারী গবেষক, মাঠ গবেষণা পর্যবেক্ষক, পর্যবেক্ষক, গবেষণা পদ্ধতি উন্নয়নকারী, তথ্য সংগ্রহকারী এবং গবেষণা প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করতে পারেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে কাজের সুযোগ। এরমধ্যে অন্যতম ইউএনডিপি, ইউনেসকো, ইউনিসেফে চাকরি নিয়মিতই চাকরির প্রস্তাব দেয়। বেশ কিছু পদের জন্য তারা সমাজবিজ্ঞানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।