আগামী ২৯ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে ৪১ বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। হিসেবের খাতায় সময় একদমই কম। চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। এ সময়ের কৌশলী প্রস্তুতিই আপনাকে এনে দিতে পারে আশানুরূপ ফল।

লিখিত পরীক্ষায় বরাবরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে থাকছে ১০০ নম্বর। গুরুত্বটাও তেমনই। তাই যুতসই প্রস্তুতির বিকল্প নেই।  তিন ঘণ্টার পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে চলুন জেনে নিই প্রস্তুতি হওয়া চাই কেমন? এ বিষয়ে কথা বলেছেন ৩৮ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পাওয়া মেহেদী হাসান।

হাতে একদমই সময় নেই। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে সাধারণত তিন ধরনের প্রশ্ন হয়ে থাকে। শেষ সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো থেকে তিন ধাপের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।

প্রথম বিভাগের প্রস্তুতির কৌশল

এ বিভাগে থাকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন। ১২টি প্রশ্নের মধ্যে মোট দশটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের মান থাকে ৪। অর্থাৎ এর উত্তরও হবে সংক্ষিপ্ত। এর জন্য যে টপিকস গুলো দেখে যেতে হবে-

১। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির সংজ্ঞা, সম্পর্ক ও পার্থক্য।

২। সার্বভৌমত্ব, স্টেট ও নন-সেস্ট অ্যাক্টরের ধারণা ও সংজ্ঞা।

৩। সফট পাওয়ার, হার্ড পাওয়ার, স্মার্ট পাওয়ার, জাতীয় শক্তি, ক্ষমতার ভারসাম্য তত্ত্ব, ভূ-রাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ধারণা ও সংজ্ঞা।

৪। জাতীয়তাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বিশ্বায়ন, মানবাধিকারের ও জঙ্গিবাদের ধারণা ও সংজ্ঞা।

৫। বৈদেশিক নীতি ও কূটনীতির সংজ্ঞা এবং নিয়ামক, ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি, অর্থনৈতিক কূটনীতি, পরিবেশের কূটনীতির সংজ্ঞা।

৬। মুক্ত বাণিজ্য, প্রটেক্টশনিজম, আঞ্চলিকতাবাদের ধারণা। COP, NATO, APEC, GCC, G7, G20, NAM, BRICS, Commonwealth, QUAD, AUKUS, SDG বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।

৭। জেনেভা কনভেনশন, ভিয়েনা কনভেনশন, NPT, UNCLOS, মন্ট্রিয়ল প্রোটোকল, UNFCCC, কিয়োটো প্রোটোকল, CTBTI, SALT-1, SALT 2 পড়তে হবে।

আরও পড়ুন : ৪১তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা : বাংলায় ভালো করার কৌশল

দ্বিতীয় বিভাগের ফিরিস্তি

এ বিভাগে থাকে বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্ন। চারটি প্রশ্ন থেকে তিনটি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের মান থাকে ১৫। এ বিভাগের জন্য শেষ সময়ে যা পড়বেন-

১। জাতিসংঘের ও বিশ্বব্যাংকের গঠন ও ইতিহাস, অঙ্গ সংস্থার গঠন ও কার্যাবলী, সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন ও শান্তি রক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও স্বল্পোন্নত দেশের উপর এর প্রভাব।

২। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক, বাণিজ্য যুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা, চীন-ভারত সম্পর্কের মূল্যায়ন, বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক ও সমস্যা মূল্যায়ন, কাশ্মীর সংকট, দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান।

৩। আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে সার্ক, আশিয়ান, বিমসটেক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মূল্যায়ন। ওআইসির সফলতা ও ব্যর্থতা।

৫। মধ্যপ্রাচ্য সংকট- সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন সংকট, কুর্দিস্তান ও ইরাক সংকট। ইরান ও নিউক্লিয়ার ইস্যু, তালেবান ও আফগানিস্তান সংকট ও কোরিয়া সংকট।

৬। বৈশ্বিক শরণার্থী সমস্যা, আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে রোহিঙ্গা সংকট ও এর সমাধান। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশের উপর প্রভাব।

আরও পড়নু : ৪১তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি ও বুকলিস্ট 

সবশেষ অংশের প্রস্তুতি

এ বিভাগে সাধারণত একটি সমস্যা উল্লেখ করে সমাধান চাওয়া হয়। এ প্রশ্নের মান থাকে ১৫। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো ইস্যুর উপর প্রশ্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে সমসাময়িক বিষয়গুলো দেখে যেতে হবে। যদি দ্বিপক্ষীয় কোনো সমস্যা সমাধান করতে বলে কিংবা নীতিপত্র তৈরি করতে বললে ঠিকঠাক লিখতে হবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট

পরীক্ষার হলে অবশ্যই সময় ব্যবস্থাপনার উপর গু করতে হবে। ক বিভাগের ৪ নম্বরের প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সর্বোচ্চ ৭ মিনিট এবং খ বিভাগ ও গ-বিভাগের ১৫ নম্বরের প্রতিটি প্রশ্নের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ মিনিট বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে

১। প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত চিত্র, চার্ট, সারণি, নিজস্ব রচিত বা সৃজনশীল মডেল, ইকুয়েশন সম্বলিত উত্তর অনেক বেশি সমৃদ্ধ হয়। এতে ভালো নম্বর পাওয়া যায়।

২। আন্তর্জাতিক বিষয়ে ভালো নম্বর পেতে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে কমপক্ষে ১টি সূত্র অথবা ১টি পাদটীকা দিলে ভালো হয়।

৩। এ সময়ে নতুন করে কিছু না পড়াই ভালো। নতুন বিষয় পড়তে গিয়ে পুরনো বিষয়গুলো রিভিশন দিতে না পারলে পরীক্ষার হলে কনফিউশন তৈরি হয়।