আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেছেন, মামলাজট নিরসনে আমরা একটা নতুন পথে যাচ্ছি। সেই পথ হচ্ছে মেডিয়েশন। মেডিয়েশনটা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। বিচারকদের মেডিয়েশন বেনিফিটগুলো বিচার প্রার্থীদের বুঝাতে হবে। গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়ায় মেডিয়েশন বিষয়ে প্রচারণা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষকে আমরা যদি মেডিয়েশনের উপকারিতাগুলো বুঝাতে পারি তাহলে তারা মেডিয়েশনের দিকে চলে আসবে।

শুক্রবার ভোলা জেলার বিচারক ও প্যানেল মেডিয়েটরদের ৪০ ঘণ্টাব্যাপী ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী দিনে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস) এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে।

বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আমরা একটা নতুন পথে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু শেখ  মুজিবুর রহমান দুঃখ করে বলেছিলেন, যে বাংলাদেশের আইনের কাঠামো বদলাতে হবে। কারণ মামলাজট, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে মানুষ বিচার পাচ্ছে না। বিকল্প একটা ব্যবস্থা বের করতে হবে। তিনি এসব কথা বলেছিলেন সত্তরের দশকে। আজ পর্যন্ত আমরা সেই বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। সেই বিকল্প ব্যবস্থাই হতে পারে মেডিয়েশন। বর্তমানে বিমসের উদ্যোগে আমরা বাংলাদেশে মেডিয়েশন ব্যবস্থাটা তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ২০২১ সালের প্রথমেই আমরা রংপুরের বিচারকদের মেডিয়েশন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেই। এরপর ধারাবাহিকভাবে সব বিভাগের বিচারকদের মেডিয়েশন বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মেডিয়েশন বিষয়ে যদিও ২০০৩ সাল থেকে আমাদের আইনের পুস্তকের মধ্যে আছে। কিন্তু মেডিয়েশন তেমন হয়নি। ২০১২ সালে মেডিয়েশনকে আবশ্যকীয় করা হয়েছে। তথাপি মেডিয়েশন করতে মানুষের অনীহা ছিল। জজ সাহেবদেরও মেডিয়েশন প্রয়োগ করার কোনো উদ্যোগ ছিল না। ২০২১ সালের ২১ মার্চ  সুপ্রিম কোর্ট থেকে একটা সার্কুলার ইস্যু করা হয়, যেখানে নিম্ন আদালতের সকল বিচারকদের জন্য মেডিয়েশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। আমরা মেডিয়েশন সম্পর্কে সচেতন করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। মেডিয়েশন আইনে আছে, করতে হবে, করো বললেই হবে না। সুপ্রিম কোর্ট থেকে ২০২১ সালের ৫ আগস্ট মেডিয়েশন পদ্ধতি কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে সে বিষয়ে গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই গাইডলাইনে বলে দিয়েছি,পক্ষ দ্বয়কে বিশেষ করে আইনজীবীদের বোঝাতে হবে মেডিয়েশন কি জিনিস। মেডিয়েশনের উপকারিতাগুলো বুঝাতে হবে। আমরা বলে দিয়েছি মেডিয়েশনের মাধ্যমে কেউ মামলা নিষ্পত্তি করতে বাধ্য নয়। মেডিয়েশন করতে যাওয়াটা বাধ্য। মেডিয়েশন করার চেষ্টা করতেই হবে। মেডিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে তখন কোর্টে যেতে পারেন। সাধারণ মানুষ মেডিয়েশনের সৌন্দর্য বুঝতে পারলে তারা মেডিয়েশনের মাধ্যমে বিরোধ বা মামলা নিষ্পত্তি করতে উদ্বুদ্ধ হবে। 

বিচারপতি ইমান আলী বলেন, আপিল বিভাগে যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় লাগে। আমরা অসংখ্য মামলা দেখেছি বছরের পর বছর থেকে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে ১৯৬৩ সালের মামলা আমরা নিষ্পত্তি করলাম। একটা মামলা নিষ্পত্তি করতে ১৫,২০ এমনকি ৩০ বছরও লেগে যায়। সুতরাং দ্রুত বিরোধ বা মামলা নিষ্পত্তি করতে  বিচারপ্রার্থীদের মেডিয়েশন বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা। মেডিয়েশনটা সবার সামনে তুলে ধরতে হবে। বিচার প্রার্থীদের মেডিয়েশনের বেনিফিটগুলো বুঝাতে হবে। 

অ্যাক্রিডিটেড মেডিয়েটর পংকজ কুমার কুন্ডুর সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রথম দিনে বিমসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এস এন গোস্বামীসহ দেশের ও আন্তর্জাতিক মেডিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।

ভোলা জেলার ১৯ জন বিচারক ও ২০ জন প্যানেল মেডিয়েটর প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছেন।

এমএইচডি/এসকেডি