ছবি- সংগৃহীত

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারে সম্পৃক্ততায় প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) সহযোগী অসীম কুমার মিস্ত্রির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন আসামিকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে পিকে হালদারের আয়কর আইনজীবী সুকুমার মৃধা, তার মেয়ে অনিন্দিতা ও এক ব্যাংক কর্মকর্তা স্ত্রীসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন। দুদক পরিচালক (জনসংযোগ কর্মকর্তা) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- পিকে হালদারের আয়কর আইনজীবী সুকুমার মৃধা, তার স্ত্রী ও সোনালী ব্যাংক লিমিটেড প্রধান কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার সিএডি (অপারেশন) তাপসী রানী শিকদার, মেয়ে অনিন্দিতা মৃধা এবং পিকে হালদারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী দুই ভাই অসীম কুমার মিস্ত্রি ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অবৈধ উপায়ে নিজ নামে ও অন্যদের নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২০ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার ৮৫০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। যা তারা নিজ দখলে রেখেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে আয়ের অবৈধ উৎস, প্রকৃতি, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, উৎস গোপন করে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করার অভিযোগ এনেছেন দুদক কর্মকর্তা। যেখানে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারা যোগ করা হয়েছে এজাহারে।

গত ২১ জানুয়ারি সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর সোয়া ১টায় গ্রেপ্তার করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন। পরে সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

এ বিষয়ে দুদক সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘পিকে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুকুমার মৃধা ও অনিন্দতা মৃধা। পিকে হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান সুকুমার মৃধা তত্ত্বাবধান করেন। পিকে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লিলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন। পরে লিলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধা পিকে হালদারের কাছে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং করেছেন মর্মে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য পেয়েছেন।’

যদিও সুকুমার মৃধা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, ‘পত্রপত্রিকায় যা লেখালেখি হচ্ছে সেই বিষয়ে পিকে হালদারের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। তিনি কেবল আমার ক্লায়েন্ট।’

গত ১৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন পিকে হালদারের আরেক সহযোগী ও কথিত বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় গত ৪ জানুয়ারি পিকে হালদারের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী শংখ ব্যাপারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে পিকে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।

ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক। ক্যাসিনো বিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই প্রশান্ত কুমার হালদারের নাম উঠে আসে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর হাজির হতে নোটিশ দিয়েছিল সংস্থাটি। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে গ্রেপ্তার পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল।

টিএইচ/ওএফ