জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার জানাজা উপলক্ষে বিচারকাজে বিরতিতে যাবেন সুপ্রিম কোর্ট।

সোমবার (২৫ জুলাই) সকালে আপিল বিভাগে বিচারকাজ শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহ এসে গেছে। আমরা জানাজায় অংশ নেব। আপিল বিভাগে ১০টা পর্যন্ত বিচারকাজ চলবে। ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিচারকাজে বিরতি থাকবে। সাড়ে ১১টা থেকে বিচারকাজ পুনরায় শুরু হবে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, হাইকোর্ট বিভাগেও সাড়ে ১০টার পরিবর্তে ১১টায় বিচারকাজ শুরু হবে।

সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ফজলে রাব্বী মিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে জাতীয় ঈদগাহ মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া আর নেই

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া শুক্রবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে (নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টা) যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শনিবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন সংসদ সচিবালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি (পিএস টু ডেপুটি স্পিকার) মো. আব্দুল মালেক।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ডেপুটি স্পিকারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার ভাতিজা ফাহাদ রাব্বী সৈকত। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ সময় আনুমানিক রাত ২টার দিকে (নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টা) নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ইন্তেকাল করেছেন। বিষয়টি আমি ফাহাদ রাব্বী সৈকত আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করছি।’

ডেপুটি স্পিকার দীর্ঘ ৯ মাস দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর সময় তার বড় মেয়ে ফাহিমা রাব্বী রিটা ও একান্ত সচিব তৌফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফয়জার রহমান এবং মায়ের নাম হামিদুন নেছা।

১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান মার্শাল ল জারি করলে তার বিরোধিতার আন্দোলনে নেমে প্রথম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি কেবল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি কাজ করেছেন।

ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১৯৯৬ সালে ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হন।

২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দশম জাতীয় সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এর আগে ২০২০ সালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদ্য প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম মারা যান।

প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার তিন মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এমএইচডি/এসএসএইচ